জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামে নবজাতক সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় এক দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ। বিচারের নামে প্রহসন করে গৃহবধূর স্বামী এবং ধর্ষণকারীকে অর্থ জরিমানা করে ছেড়ে দেয় এলাকার মাতবররা। ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ন্যায়বিচার পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ধর্ষণকারী জাহিদুল ইসলাম।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, ১৪ বছর আগে রিকশাচালক আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে সংসারে কোনো সন্তান না আসায় তারা একটি কন্যাসন্তান দত্তক নেয়। এরই মধ্যে অধিক উপার্জনের আশায় ঢাকায় রিকশা চালাতে যান তার স্বামী আব্দুল হাই। স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করত। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলে গৃহবধূর সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। চার বছর ধরে অবৈধ সম্পর্কের ফলে গৃহবধূ দুইবার গর্ভবতী হন। প্রথমবার তার সন্তানকে নষ্ট করে জাহিদুল। দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর ওই গৃহবধূ জাহিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে অবস্থান গ্রহণ করে।
এ সময় জাহিদুলের স্ত্রী ও তার দুই সন্তান গৃহবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় সুবিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে উলিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার গত ২১ জুলাই তার বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসান। সেখানে গৃহবধূর স্বামী আব্দুল হাইকে ১০ হাজার টাকা ও ধর্ষক জাহিদুল ইসলামকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশের দুই দিন পর গৃহবধূকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন সালিশকারী আবু সাঈদ সরকার। এরপর অনেক দেন-দরবার করেও পিতৃত্বের দাবি পূরণ করতে না পেরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ওই নারী।
এরই মধ্যে গত ২১ আগস্ট কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় গৃহবধূটি। কিছুটা সুস্থ হয়েই পিতৃত্বের দাবিতে উলিপুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে তাকে ফেরত দেয়া হয়। পরে চলতি বছরের ৩০ জুলাই কুড়িগ্রাম বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে একটি মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। উলিপুর থানা পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে বলেও তদন্তে জানানো হয়। আদালত আগামী ৩ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকালে নির্যাতিতা গৃহবধূ কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে নবজাতক সন্তান হিয়া মণির পিতৃত্বের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘটনার বর্ণনা ও সন্তান নিয়ে বিধবা মায়ের কাছে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে একটি চক্রান্ত। স্থানীয় মাতবরের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোর্টে মামলা করেছে সেখানেই সবকিছু হবে।
নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী আব্দুল হাই বলেন, বিচারের নামে তার ও তার স্ত্রীর প্রতি প্রহসন করা হয়েছে। উল্টো স্ত্রীর খাওয়া এবং চিকিৎসার জন্য তাকেও জরিমানা করা হয়েছে। সমাজ ব্যবস্থার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে পারছেন না। তিনি অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান সালিশকারী আবু সাঈদ সরকার তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গৃহবধূর অভিযোগ শোনার পর আমি তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে পরার্মশ দিয়েছি। আমি সালিশে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এ বিষয়ে সালিশ করার এখতিয়ার আমার নেই। তবে তিনি জরিমানার বিষয়ে বলেন, বাদী এবং বিবাদীর জমি বন্ধক নেয়ার অর্থ আদায় করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, নির্যাতিত নারী থানায় মামলা করতে আসেননি। থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কোর্ট থেকে তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।