আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মনে করুন, আপনি যেখানে বসবাস করেন সেখানকার এক অদ্ভুত নিয়ম হলো, যার বাড়িতে যত বেশি নরমুণ্ড বা মানুষের মাথার খুলি আছে, সে তত বেশি সম্মাননীয়। শুনে মনে হতে পারে কোনো রূপকথা কিংবা আদিম যুগের কোনো রীতির কথা বলা হচ্ছে। তবে না, এটি মোটেও সেরকম কিছু নয়।
১৯৬০ সালেও ভারতের একটি গ্রামে এটিই ছিল মান্যগণ্য হওয়ার সামাজিক একটি রীতি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটিই সত্য।
তাহলে কোথায় সেই গ্রাম?
সেই গ্রামের খোঁজে যেতে হবে ভারতের নাগাল্যান্ড। প্রদেশের ‘লংওয়া’ নামের গ্রামটিতেই প্রচলন ছিল এই অদ্ভুত রীতির। এই গ্রামে থাকেন কোনিয়াক উপজাতির মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার ছোট্ট পাহাড়ি এই গ্রাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। নাগাল্যান্ডের মোন জেলা সদর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে লংওয়া। গ্রামটির অবস্থানও আকর্ষণীয়৷ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের ঠিক মাঝখানে পড়ে গ্রামটি৷
গত শতাব্দীর ষাটের দশেকেও গ্রামের পুরুষরা যখনই সংঘর্ষে জড়িয়েছেন, তখনই শত্রুপক্ষের মাথা কেটে, তা সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন৷ বহুকালের রীতি অনুযায়ী, যার সংগ্রহে যত বেশি মানুষের মাথা সে তত সম্মাননীয়৷
কোনিয়াক নারী-পুরুষরা মুখে ও গায়ে এক ধরনের ‘কল্কা’ (নকশা) করেন। মাথায় পরেন অদ্ভুত এক ধরনের মুকুট। গোটা শরীরে থাকে বড়সড় অলঙ্কার। সে এমন সাজ যা দেখে সভ্য মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক হয়৷ এমনকি গ্রামের বাড়িগুলোও সাজানো হয়েছে পশুর কাটা মাথা দিয়ে ৷
কোনিয়াকদের গ্রাম প্রধানকে বলা হয় অঙ্ঘ ৷ এই নৃ-গোষ্ঠীতে বহুবিবাহের প্রচলন আছে। বর্তমান অঙ্ঘের ৬০ জন স্ত্রী রয়েছেন বলে জানা যায়৷ বিরাট ক্ষমতা অধীকারী হয়ে থাকেন গ্রামের অঙ্ঘ। আশপাশের ৭০টি গ্রামের শাসক তিনি৷ যার কিছু রয়েছে ভারত ভূখণ্ডে আর বাকিগুলো মিয়ানমারে।
লংওয়া গ্রামটি ভারত ও মিয়ানমার দুই দেশে বিস্তৃত৷ জেনে রাখা ভাল, এটি একটি বিরল আন্তর্জাতিক সীমান্ত৷ এখানে ভিসা ছাড়াই দুই দেশে যাতায়াত করতে পারেন স্থানীয়রা৷ গ্রাম প্রধানের বাড়িটিও ঠিক সীমান্তের মাঝামঝিই অবস্থিত।
আরও বদনাম রয়েছে লংওয়ার। এখানকার মানুষের জীবিকার মূল উৎস হলো, গাঁজা ও আফিমের চাষ৷ মিয়ানমারে মাদকের চাহিদা থাকায়, এখানে উৎপাদিত গাঁজা এবং আফিমের ব্যবসা বেশ রমরমা। সমালোচকরা বলেন, অধিকাংশ কোনিয়াকই মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত৷ তবুও পর্যকদের পছন্দের ঠিকানা লংওয়া। কিন্তু কেন?
যেহেতু ভয় আর রহস্যকে জয় করতে মানুষ ভালবাসে, তাই পর্যটকদের কাছে এই জায়গা আকর্ষণীয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। রূপকথার গল্প থেকে উঠে আসা নরমুণ্ড শিকারি কোনিয়াকদের সামনিসামনি দেখার সুযোগ কে ছাড়তে চাইবে! গ্রামে এখনও ১৩ জন নৃমুণ্ড শিকারি বেঁচে আছেন। আর আছে সবুজ পাহাড়, পাহাড়ি নদী, টলটলে পানির লেক। লংওয়া যেন ভয় আর সুন্দরের নেশা ধরানো এক মাদক!
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।