জুমবাংলা ডেস্ক: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় দুই স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার চরআড়ালিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদা জামানের বাড়ির লোকজন হওয়ায় এ ঘটনায় মামলা না করে বিষয়টি নিজেই মীমাংসা করতে চেয়েছেন চেয়ারম্যান। তবে পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় মামলা হবে।
ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, দুই ভুক্তভোগী রায়পুরার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদেরকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত আট জন। তারা এলাকার প্রভাবশালী এবং চেয়ারম্যান মাসুদা জামানের বাড়ির লোকজন। তাদের বিরুদ্ধে মামলার করার মতো অবস্থা নেই ভুক্তভোগীদের। তাই থানায় না গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন তারা। চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলেছেন তাদের।
তবে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মীমাংসাযোগ্য নয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
অভিযুক্তরা হলো- চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের সেন্টু মিয়ার ছেলে কাইয়ুম মিয়া, শাহ মিয়ার ছেলে মুন্না মিয়া, তাদের বন্ধু রমজান মিয়া, সাইফুল মিয়া, রমজান আলী, আশিক মিয়া, ইমরান এবং অজ্ঞাত আরও একজন।
দুই ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকালে কাইয়ুম ও মুন্নার সঙ্গে নদীতে নৌকায় ঘুরতে গিয়েছিল দুই ছাত্রী। সন্ধ্যায় নৌকাটি তীরে নিয়ে কাইয়ুম ও মুন্না। সন্ধ্যা হয়ে গেলে কৌশলে তারা দুই ছাত্রীকে একটি বিদ্যালয়ের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পরে তারা আরও ছয় বন্ধুকে ডেকে আনে। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে সেখানেই রেখে চলে যায়। ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী বাড়িতে ফিরলে তাদের পরিস্থিতি দেখে কারণ জানতে চান পরিবারের সদস্যরা। পরে বিস্তারিত জানায় তারা।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ঘটনা জানার পর চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বিচার চেয়েছি। তিনি আমাদের বলেছেন, বিচার করে দেবেন। মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে পুলিশের কাছে যাইনি।’
ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। আমরা গরিব মানুষ। মামলা করার মতো সামর্থ্য নেই। মেয়েকে ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে হবে, এই চিন্তায় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। চেয়ারম্যান বলেছেন দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন। তবে এখনও বসেননি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ধর্ষণে অভিযুক্ত আট জনের মধ্যে পাঁচ জনই চেয়ারম্যান মাসুদা জামানের বাড়ির বাসিন্দা। এজন্য মামলা না করে বিষয়টি মীমাংসা করতে চান চেয়ারম্যান। আর ধর্ষণের ঘটনা গ্রাম আদালতে কীভাবে মীমাংসা করবেন তিনি।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মাসুদা জামান বলেন, ‘ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর পরিবার মামলা করতে চায় না বলে ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছে। এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে দ্রুতই বিচারে বসবো।’ তবে ধর্ষণের ঘটনা চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালতে মীমাংসাযোগ্য কিনা জানতে চাইলে কোনও উত্তর দেননি চেয়ারম্যান।
রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি শুনেছি। এটি গ্রাম আদালতে মীমাংসাযোগ্য নয়। এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে। সে প্রস্তুতি চলছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।