আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই সবার আগে উঠে আসবে ইমরান খানের নাম। মাঠের মধ্যে যেমন নায়কের মতো বিচরণ করছেন, মাঠের বাইরেও। নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান তথা বিশ্ব ক্রিকেটে অন্য জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন। সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানের মতো দলকে বিশ্বসেরা করেছিল। মাঠের মধ্যে সেলিম মালিক, জাভেদ মিয়াঁদাদদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তেমনই মাঠের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন।
গতকাল ৫ অক্টোবর ছিল ইমরান খানের জন্মদিন। বিশ্ব ক্রিকেটের এই কিংবদন্তী ৭০ বছরে পা দিলেন। ৭০ বছর বয়সেও যেন সেই তারুণ্যের তেজ। বার্ধ্যকে এসেও এখনও যে কোনও মধ্যবয়সীকে অনায়াসে পেছনে ফেলবেন ইমরান খান নিয়াজি। বাইশ গজে যেমন দক্ষ ছিলেন, বাইশ গজের বাইরেও কিন্তু তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। দুর্দান্ত ‘পারফরম্যান্স’ ছিল ইমরান খানের। সেই সময় তিনি মহিলাদের কাছে ছিলেন হার্টথ্রব। বলিউডের একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে নাকি তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। শুধু বলিউড কেন, বিশ্বের অনেক তরুণীকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন ইমরান খান।
যে ক’জন বলিউডি নায়িকার সঙ্গে ইমরান খানের প্রেমের গল্প গুঞ্জন তৈরি করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল জিনাত আমন। এই বলিউডি অভিনেত্রী ১৯৭০–এর দশকে হিন্দি সিনেমার সেনসেশন ছিলেন। সত্য–মিথ্যা যাইহোক, ইমরান ও জিনাত আমনের প্রেমের গল্পে ভেসে ওঠে ক্রিকেট ও বলিউডের গভীর সংযোগের কথা। তাঁদের তীব্র প্রেমের গল্প সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিল। কিন্তু সেই প্রেমের গল্পের সুখের সমাপ্তি হয়নি। যদিও সীমান্তের ওপার থেকে ইমরান ও জিনাত আমনের সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
একসময় ইমরানের নামের সঙ্গে প্লেবয় তকমা জুড়ে গিয়েছিল। শুধু জিনাত আমন নয়, সাবানা আজমির সঙ্গেও ইমরান খানের প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। রেখার সঙ্গেও সেই সময় ইমরানের সম্পর্ক নিয়ে নানা মহলে জলঘোলা হয়েছিল। মুম্বইয়ের বিভিন্ন নাইট ক্লাবে নাকি দুজনকে প্রায়শই একসঙ্গে দেখা যেত। সুদূর পাকিস্তান থেকে রেখার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটে আসতেন ইমরান। শেষ পর্যন্ত তিনি জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন। যদিও তাঁদের সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
পড়াশোনায় যথেষ্ট মেধাবি ছিলেন ইমরান খান। লাহোরের মর্যাদাপূর্ণ আইচিসন স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং তারপর অক্সফোর্ড থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়। অভিষেক টেস্টের সময় যখন ইংল্যান্ডের রানির সঙ্গে পরিচয়পর্ব চলছিল পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরানের নামটি ভুলে গিয়েছিলেন। অন্য এক সহ খেলোয়াড় তাঁর নামটি মনে করিয়ে দেন। তারপরে তাঁকে দলে জায়গা দেওয়া হয়নি। তিন বছর পর ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আবার টেস্ট দলে ফিরে আসেন।
পরে অধিনায়ক মুস্তাক মহম্মদ ও সরফরাজ নওয়াজের পরামর্শে ইমরান ধীরে ধীরে বলের গতি বাড়াতে শুরু করেন এবং দলের প্রধান জোরে বোলারে পরিণত হন। ১৯৭৬–৭৭ মরশুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে তৃতীয় টেস্টে দারুণভাবে জ্বলে উঠেছিলেন ইমরান। পাকিস্তান ০–১ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। শেষ টেস্টে ১২ উইকেট নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরান ইমরান।
সেই সফরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ইমরান। ডেনিস লিলি ও উইকেটকিপার রনডি মার্শ গোটা সফরে পাকিস্তানীদের স্লেজিং করে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুস্তাক মহম্মদ সিডনি টেস্টে ইমরান ও সরফরাজকে বাউন্সার দেওয়ার নির্দেশ দেন। লিলি ও মার্শকে টার্গেট করেছিলেন ইমরান। আম্পায়ার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি লিলি ও মার্শকে বাউন্সার দিয়েছিলেন। সিলি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে জাভেদ মিয়াঁদাদ লিলি ও মার্শকে ভয় দেখাতে শুরু করেন, ‘ইমরান তোমাদের সত্যিই মেরে ফেলবে।’
ইমরানের চমকপ্রদ পারফরম্যান্স এবং তাঁর উদ্যমী শৈলী তাকে পাকিস্তানের আগে অস্ট্রেলিয়ায় হিরো বানিয়েছে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে যখন তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন, তখন তিনি ক্রিকেটারের চেয়ে তারকা হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে, ব্রিটেনে তাঁদের ঘন ঘন প্রেমের ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু হয়। তাকে ‘প্রাইড অফ নাইটক্লাব’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট দল যেসব শহরে গিয়েছিল, তার প্রায় প্রতিটি নাইটক্লাবে তাঁদের আগমনের কথা লেখা ছিল।
১৯৭৯ সালের নভেম্বরে ইমরান যখন পাকিস্তান দলের সাথে খেলতে ভারতে আসেন, তখন এখানকার সংবাদপত্রগুলি প্রথমে তার জন্য ‘প্লেবয়’ শব্দটি ব্যবহার করে। ব্যাঙ্গালোরের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে ইমরান তাঁর ২৭তম জন্মদিন সতীর্থদের সাথে উদযাপন করেন। কিছু ভারতীয় সংবাদপত্র দাবি করে যে, সেদিন সন্ধ্যায় তাঁকে বলিউড তারকা জিনাত আমানের সাথে দেখা গেছে।
দ্বিতীয় টেস্টের সময় ব্যাক স্ট্রেনের কারণে ইমরান যখন দ্বিতীয় ইনিংসে এক ওভারের বেশি বল করতে পারেননি, তখন পাকিস্তানের রক্ষণশীল উর্দু প্রেস জিনাত আমানের খবরটি ছেপে দেয়। ‘অনৈতিক কার্যকলাপে’ লিপ্ত এবং ক্লাবে ভারতীয় অভিনেত্রীদের সাথে রাত কাটানোর জন্য নিন্দা করা হয়। সেই সিরিজে পাকিস্তান হেরে গিয়েছিল। ইমরান খানের খারাপ পারফরমেন্সের জন্য জিনাত আমনকে দায়ী করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।