জুমবাংলা ডেস্ক : চ্যাটিং অ্যাপ টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের পর ভূমি মন্ত্রণালয়কে সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই চ্যানেলে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এনআইডি যাচাই করার সেবা বন্ধ করে দেওয়ার পর টেলিগ্রামের ওই চ্যানেল থেকে আর ব্যক্তির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কথা হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিজিডি ই–গভ সার্টের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি নিয়ে আমাদের যতটুকু করণীয় তা করছি। আর এটি মূলত নির্বাচন কমিশনের কাজ। এটি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন।’
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে তথ্য যায়নি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই সিস্টেম ম্যানেজারকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া যাদের কাছ থেকে তথ্য গেছে বলে সন্দেহ হয়েছে, বুধবার (গতকাল) দিবাগত রাত ১টার সময় তাঁদের সার্ভিস দেওয়া বন্ধ আছে। তবে এর মধ্যে আমার কাছে সেবা নিচ্ছে সরকারি–বেসরকারি এমন প্রতিষ্ঠানই রয়েছে।’
দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ব্যবস্থা আছে— যদি যারা সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্সের কাজ করে, সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স থেকেই হয় সব সময়, সফটওয়্যার যারা লুক আফটার করে, যদি হয় তাহলে ব্ল্যাক লিস্টেড করার জন্য আমরা সুপারিশ করব। সে যেন বাংলাদেশে কোথাও কাজ না পায়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেলিগ্রাম চ্যানেলে তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পর বিজিডি ই–গভ সার্ট থেকে ইসিকে জানানো হয়। এরপর যাচাই করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনআইডি সেবা দেওয়া বন্ধ রাখে ইসি।
আরও জানা যায়, ইসি থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে এবং বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন ইসিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইটি টিম ও ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের যারা এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সঙ্গে জড়িত এমন কর্মকর্তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত জুলাই মাসেও ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনআইডি যাচাই সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল কমিশন। এরপর জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং তাঁদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের শর্তে পুনরায় সেবাটি চালু করে ইসি।
বর্তমানে ১৭৫টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইসির সার্ভার থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সেবা নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইসির দেওয়া এপিআইয়ের মাধ্যমে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সেবা নিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয় নামজারি, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশনের কাজে নাগরিকের এনআইডির তথ্য যাচাই করে থাকে।
জানা যায়, কয়েক দিন যাবৎ টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে এনআইডি নম্বর (১০ সংখ্যার এনআইডি নম্বর) ও জন্মতারিখ দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রীর নাম, জন্মতারিখ, ধর্ম, লিঙ্গ, ফোন নম্বর (দেওয়া থাকলে), বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এবং ছবি দেখা যাচ্ছিল।
ইসির তথ্য ভান্ডারে তথ্যভান্ডারে কমবেশি ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। ইসি সূত্রমতে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
ইসির তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করতে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হয়। একইভাবে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে টেলিগ্রাম চ্যানেলটি থেকে তথ্য পাওয়া যায়।
এর আগে গত জুলাইয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন থেকে নাগরিকের তথ্য বেহাতের ঘটনা ঘটে। তখনো ওই প্রতিষ্ঠানকে কিছুদিন সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল কমিশন। যদিও পরে তা খুলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনা সামনে আসার পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে কয়েকবার বৈঠক করে আইসিটি বিভাগ। নিজেদের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজস্ব সার্ট গঠনেরও নির্দেশনা দেয় আইসিটি বিভাগ। যদিও সবগুলো প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।