পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার নিম্নভূমি ও বিলাঞ্চলে বছরভর পানিবন্দি থাকেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসা ভাসমান সবজি চাষ তাদের জীবনে এনে দিয়েছে আর্থিক মুক্তি।
নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী-দোবড়া, কলার-দোয়ানিয়া ও মালিখালী ইউনিয়নের ১৮০ হেক্টর জলাশয় জুড়ে বর্তমানে চলেছে ভাসমান সবজি চাষ। ৪১ প্রজাতির শাক-সবজি চারা আবাদ ও বিক্রি হয় বর্ষা মৌসুমে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের মূল উৎস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) সম্প্রতি এই পদ্ধতির বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভাসমান বেড তৈরি হয় আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত। কচুরিপানা, শ্যাওলা, টেপপানা, গুঁড়িপানা, খড়কুটা ও নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে তৈরি করা হয় বীজতলা বা ‘ধাপ’। ১০০–১৮০ ফুট লম্বা, ৫–৬ ফুট চওড়া ও এক-দেড় ফুট পুরু এই বেডগুলো ৮–১০ ফুট পানিতে ভেসে থাকে। পুরুষরা ধাপ তৈরি ও পরিচর্যা করেন, নারী ও শিশুরা বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটানোর কাজ করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাসমান বেডে শসা, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, বেগুন, টমেটো, পেঁপে, মরিচ, লালশাক, পালংশাকসহ নানা সবজি চাষ হচ্ছে। শীতকালে পানির মাত্রা কমে গেলে এই বেডে চারা বিক্রি ও বোরো ধান রোপণ করা হয়।
মুগারঝোর গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম সেখ বলেন, “আগে বছরের প্রায় ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকায় এক ফসল ছাড়া কিছু হতো না। ভাসমান সবজি চাষ শুরু করার পর আর অভাব-অনটনের দিন নেই। বেড প্রতি খরচ ১১ হাজার টাকা হলেও এবার আশা করি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাতুন্নেছা এশা জানান, ১৮০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ১৭৫টি ভাসমান বেডে পরিবেশবান্ধব ও জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এতে সেচের প্রয়োজন কম, তুলনামূলক খরচও কম এবং খুব কম সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
এই ব্যতিক্রমী কৃষি পদ্ধতি শুধু স্থানীয় অর্থনীতির জন্য নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এখন এক স্বীকৃত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।