নাজমুল ইসলাম : দেশের নাজুক পরিস্থিতিতে রিজার্ভ না বাড়লেও ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত তিন মাসে প্রায় ৯৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
গত আগস্টে পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার ঘোষণা দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত গভর্নরের এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘোষণার মাসেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়েছে ডলার; যা অক্টোবর মাসেও অব্যাহত রয়েছে। তবু বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না। বাস্তবতা হলো, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দেড় শ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে এখন সংশ্লিষ্ট মহলে তুমুল আলোচনা চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৯৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক এসব ডলার কিনেছে। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে প্রায় ২০ মিলিয়ন এবং তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে বিক্রি করা হয় ১১০ মিলিয়ন ডলার। আর আগস্টে ডলার বিক্রি করা হয় ১৭০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে রিজার্ভ থেকে ৬৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকার বিষয় জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জুমবাংলাকে বলেন, নতুন গভর্নর স্যার ডলার বিক্রি বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে একটি ডলারও বিক্রি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলেও ডলার বিক্রি আপাতত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া আইএমফের লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভের মানদণ্ড স্তরও কিছুটা নিচে রয়েছে। সংস্থাটি এই পরিস্থিতি উন্নতির পরামর্শ রেখেছে। যার চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ হবে ২০২৬ সালের মধ্যে। এ কারণে দায়িত্ব নিয়েই গভর্নর ব্যয়যোগ্য ডলারের লক্ষ্যপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন।
গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণের শর্তে বিপিএম-৬ হিসাবে তা ১৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে চলতি দায় এবং বকেয়া পাওনা বাবদ প্রায় ৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ (এনআইআর) দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের আমদানিজনিত আকু বিল বাবদ ব্যয় বাদ যাবে প্রায় ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। তখন ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ হবে প্রায় ১৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও আগামী ডিসেম্বরে এই ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য রয়েছে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। এ পরিস্থিতিতে গোপনে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হতে থাকায় সেই লক্ষ্য অর্জন এখন শঙ্কিত ।
তবে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইএমএফের ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড় এবং অন্যান্য ঋণের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হবে; যা লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর। নতুন করে বিক্রি না করারও ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দাবি করেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে একটি ডলারও বিক্রি হয়নি। যেহেতু ডলার বিক্রি বন্ধ রয়েছে, তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই; বরং বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
কারণ, কিছু না কিছু ডলার তো আসবেই। একইভাবে গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি জানান, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি রিজার্ভ বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে ভিন্নকথা রিজার্ভ এখন নিম্নমুখীর পথে।
ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।