চাঁদে যেতে কতক্ষণ লাগে- এই প্রশ্নের উত্তর অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আপনি নভোযানে চড়ে সোজা চাঁদে পৌঁছাবেন, নাকি চারপাশে কয়েক পাক ঘুরে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন? যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচ্ছেন, তা কতটা আধুনিক? সরাসরি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে চাঁদে যাবেন, নাকি পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করবেন, এরকম অনেক বিষয়ের ওপর চাঁদ-যাত্রার সময় নির্ভর করে।
বর্তমানে যে রকেট ব্যবস্থা ও জ্বালানি ব্যবহার করে চাঁদে যাওয়া হয়, তাতে গড়ে তিন দিন লাগে। তবে সবচেয়ে দ্রুত চাঁদে যাওয়ার রেকর্ডটি নিউ হরাইজন প্রোবের। এটি চাঁদকে অতিক্রম করে গিয়েছিল মাত্র ৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে। পরে চাঁদ ছাড়িয়ে চলে গেছে বামন গ্রহ প্লুটোর দিকে।
এখন পর্যন্ত নভোচারী নিয়ে সবচেয়ে দ্রুত চন্দ্রযাত্রার রেকর্ডটি অ্যাপোলো ৮ নভোযানের দখলে। উৎক্ষেপণের মাত্র ৬৯ ঘণ্টা ৮ মিনিটের মধ্যে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছায় নভোযানটি।
চাঁদে পৌঁছাতে কত সময় লাগে, তা নিয়ে আলোচনার আগে জানা প্রয়োজন চাঁদ কত দূরে। পৃথিবী ও চাঁদের গড় দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। কিন্তু চাঁদ যেহেতু সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না, খানিকটা ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে পৃথিবীকে ঘিরে, তাই পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হামেশা পরিবর্তন হয়।
আলো সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। সেই হিসেবে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছাতে গড়ে ১ দশমিক ৩ সেকেন্ড সময় লাগবে। তবে চাঁদ যখন পৃথিবীর সবেচেয় কাছে থাকবে, তখন পৌঁছাতে সময় লাগবে ১ দশমিক ২ সেকেন্ড। আর যখন সবচেয়ে দূরে থাকবে, তখন লাগবে ১ দশমিক ৪ সেকেন্ড। আলোর জন্য দুই সেকেন্ডের এদিক-ওদিক মানে প্রায় ৬ লাখ কিলোমিটার কমবেশি, সাধারণ নভোযানের জন্য এ দূরত্ব কিন্তু কম নয়!
পার্কার সোলার প্রোবের নাম নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। সূর্য গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে নভোযানটি। এটি এখন পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দ্রুততম নভোযান। ২০২১ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। নভোযানটির রেকর্ডকৃত গতি ছিল সেকেন্ডে ১৬৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার কিলোমিটার। নাসা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পার্কার সোলার প্রোব যখন সূর্যের ৪০ লাখ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যাবে, তখন সূর্যের মহাকর্ষ ব্যবহার করে নভোযানটির গতি হবে ঘণ্টায় ৬ লাখ ৯২ হাজার কিলোমিটার।
সুতরাং, আপনি যদি তাত্ত্বিকভাবে পার্কার সোলার প্রোবে চড়ে চাঁদে যেতে চান, তাহলে গড়ে সময় লাগবে ৩৯ দশমিক ৪ মিনিট। সবচেয়ে কাছের দূরত্বে যেতে লাগবে ৩৭ দশমিক ২ মিনিট, আর দূরের দূরত্বে যেতে লাগবে ৪১ দশমিক ৪ মিনিট। (তবে এই বেগে ছুটে চলা কোনো নভোযানে থাকলে আপনার অবস্থা যে খুব একটা সুবিধার হবে না, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন। ওরকম ভয়ংকর ত্বরণ সহ্য করা চাট্টিখানি কথা নয়।)
এবার একটু কল্পনার ডানা মেলে ঘুরে আসি চাঁদে। এতক্ষণ যে নভোযানগুলোর কথা বললাম, সেগুলো হয়তো আপনি চোখের সামনে দেখেননি। আর ওগুলো ব্যবহার করে চাঁদে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই এখন এমন কিছু যানবাহনের কথা বলব, যেগুলোতে আমরা হরহামেশা চলাফেরা করি।
- পায়ে হেঁটে: ঘণ্টায় ৩ মাইল বেগে হাঁটলে চাঁদে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ হাজার ৩১৭ দিন। প্রায় ৯ বছর।
- সাইকেলে চড়ে: ১৫ মাইল বেগে সাইকেল চালিয়ে চাঁদে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬৬৩ দিন বা ১.৮ বছর।
- ঘোড়ায় চড়ে: ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে চাঁদে যেতে লাগবে প্রায় ৩৯৮ দিন বা ১ বছরের মতো।
- মটরসাইকেলে চেপে: ৮৩ দিনে চাঁদে পৌঁছাতে হলে মটরসাইকেল চালাতে হবে ঘণ্টায় ১২০ মাইল বেগে।
- গাড়িতে (কার) চড়ে: গাড়ির বেগ ঘণ্টায় ৬০ মাইল হলে চাঁদে পৌঁছাতে পারবেন প্রায় ১৬৬ দিনে।
- উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেন: ঘণ্টায় প্রায় ৩২২ মাইল পাড়ি দেওয়া ট্রেন নিয়ে চাঁদে যেতে পারবেন মাত্র ৩০ দিন বা এক মাসে।
- বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ: ঘণ্টায় ৫৭৫ মাইল বেগে চললে চাঁদে যেতে পারবেন প্রায় ১৭ দিন বা অর্ধমাসের মধ্যে।
- কনকর্ড সুপারসনিক জেট: মাত্র এক সপ্তাহে চাঁদে পৌঁছাতে পারবেন এ সুপারসনিক জেটে। জেটটি চলে ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৫০ মাইল বেগে।
- স্পেসএক্স স্টারশিপ: এই নভোযানের বেগ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৬ হাজার ৭৭৭ মাইল হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এখানেও ত্বরণের ব্যাপারটা চলে আসে। হয়তো মালামাল পাঠাতে ব্যবহৃত হতে পারে এই রকেট। তবে ত্বরণের সমস্যা সমাধান হলে, এতে চড়ে আপনি অর্ধদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন চাঁদে। কারণ সময় লাগবে মাত্র ১৪ ঘণ্টার মতো। এক দিনের ছুটি নিয়ে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারবেন চাঁদ থেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।