আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটিশ যুবরাজ অ্যান্ড্রু (UK’s Prince Andrew) এক নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়ানি মামলার মুখোমুখি হওয়ায় তার সামরিক খেতাব এবং রাজকীয় সম্মান ও পৃষ্ঠপোষকতা হারিয়েছেন। এখন থেকে তার পরিচয়ে রয়েল হাইনেস থাকবে না।
২০০১ সালে যখন তিনি যৌন নির্যাতন করেছিলেন বলে অভিযোগ, সে সময় ওই নারীর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে নামের ওই নারী প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে করা মামলায় দাবি করেছেন যে, তিনি ২০০১ সালে তাকে অপব্যবহার করেছিলেন। তবে অ্যান্ড্রুর আইনজীবীরা বলেছেন যে, অভিযোগটি খারিজ করা উচিত। তারা ২০০৯ সালের একটি চুক্তির উল্লেখ করেন যেটি জিউফ্রে দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু নিউ ইয়র্কের একজন বিচারক রায় দিয়েছেন, এই মামলা চলতে পারে।
দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে ২০১৯ সালে সব ধরনের রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন ৬১ বছর বয়সী ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রু (Prince Andrew, Duke of York)। এর আগে বিবিসি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন এই রাজপুত্র।
বৃহস্পতিবারের এই উদ্যোগের পর সব ধরনের রাজকীয় সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন তিনি। বৃহস্পতিবারে এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্রাসাদ বলছে, রানির অনুমোদন ও সম্মতিতে ডিউক অব ইয়র্কের সামরিক খেতাব ও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা রানির কাছেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তিনি কোনো রাজকীয় দায়িত্বে থাকছেন না।
আর যুক্তরাষ্ট্রে চলা তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাকে মোকাবিলা করতে হবে। এমন এক সময় এই পদক্ষেপের খবর এসেছে, যখন প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে চলা যৌন হয়রানির দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহারে মার্কিন বিচারকদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন তার আইনজীবীরা।
রাজকীয় সূত্রের বরাতে আলজাজিরা জানায়, প্রিন্স অ্যান্ড্রু এখন থেকে ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ ব্যবহার করতে পারবেন না। তার দায়িত্বগুলো রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সাবেক হেলিকপ্টার পাইলট প্রিন্স অ্যান্ড্রু ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ভার্জিনিয়া জিউফ্রে নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন হামলা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জিউফ্রের অভিযোগ, যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান সহযোগীদের হাতে তাকে তুলে দিয়েছিল তার প্রয়াত অর্থদাতা জেফ্রি এপিস্টেইন।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী থেকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পদমর্যাদা কেড়ে নিতে রানির কাছে চিঠি লিখেছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাবেক ১৫০ কর্মকর্তা। ৯৫ বছর বয়সী রানি দেশটির সশস্ত্র, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান।
তবে যুবরাজ ধারাবাহিকভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বাকিংহাম প্যালেস বলেছে যে, তারা চলমান আইনি বিষয়ে মন্তব্য করবে না। নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউনাইটেড স্টেটস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক লুইস এ কাপলানের ৪৬ পৃষ্ঠার সিদ্ধান্তে মামলাটি খারিজ করার প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। এর অর্থ হল ৬১ বছর বয়সী ডিউক অফ ইয়র্কের বিরুদ্ধে মামলা এই বছরের শেষের দিকে আদালতে শুনানি হতে পারে।
বিচারক কাপলান বলেছেন যে, তার রায় মিসেস জিউফ্রের অভিযোগের ‘সত্য বা মিথ্যা’ নির্ধারণ করেনি। জিউফ্রে বলেছিলেন, তিনি ‘সন্তুষ্ট’ যে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মামলাটি খারিজ করার প্রচেষ্টা অস্বীকার করা হয়েছিল এবং ‘তার বিরুদ্ধে তার দাবির বিষয়ে এখন প্রমাণ নেওয়া হবে’। তার আইনজীবী ডেভিড বয়েসের জারি করা একটি বিবৃতি যোগ করেছে যে, ‘তিনি সেই দাবিগুলোর যোগ্যতার বিচারিক সিদ্ধান্তের জন্য উন্মুখ’।
আদালতের নথিতে, মিসেস জিউফ্রে বলেছিলেন যে তিনি প্রয়াত বিলিয়নেয়ার ফাইন্যান্সার এপস্টেইনের যৌন পাচার এবং অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন। তিনি তাকে প্রভাবশালী পুরুষদের হাতে তাকে নিপীড়নের শিকার হতে দিয়েছেন। রানির দ্বিতীয় পুত্র প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ২০১৯ সালে বিবিসি নিউজনাইটের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে ভার্জিনিয়া জিউফ্রের সঙ্গে কখনও দেখা হওয়ার কথা তার মনে নেই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যে তাদের মধ্যে কোন যৌন সম্পর্ক ‘ঘটেনি’।
২০০৯ সালে প্রিন্স অ্যান্ড্রু বন্ধু এপস্টেইনের সঙ্গে ভার্জিনিয়া রবার্টসের (বর্তমানে ভার্জিনিয়া জিউফ্রে নামে পরিচিত) একটি বন্দোবস্ত চুক্তি হয়। অর্থের বিনিময়ে করা এই চুক্তির মাধ্যমে ‘অন্য যেকোন ব্যক্তি বা সত্তার’ জন্য জিউফ্রের সকল অভিযোগ থেকে তাদের দায় মুক্তি প্রদান করা হয়েছে।
জিউফ্রে গত আগস্টে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার অভিযোগ, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাকে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করেছিলেন। তার বয়স তখন ১৭ বছর ছিল। সে সময় তিনি লন্ডনে এপস্টেইনের সাবেক সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বাড়িতে ছিলেন। জিউফ্রে বলেছেন যে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু এপস্টেইনের দুটি বাড়িতেও তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপণ করেছেন।
এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পন্ন মীমাংসা চুক্তির মাধ্যমে জিওফ্রেকে ৫ লাখ ডলার প্রদান করা হয়েছিল। অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা তার দেওয়ানী মামলার অংশ হিসাবে এই চুক্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। চুক্তিতে জিউফ্রের অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, এপস্টেইন তাকে কিশোরী হিসেবে ফ্লোরিডার পাম বিচে তার এস্টেটে ‘যৌন দাসী’ হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু মামলা খারিজ করার জন্য যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এপস্টেইন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মাধ্যমে জিউফ্রে ‘অর্থ’ চাইছেন। বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী জিওফ্রে অ্যান্ড্রুর কাছ থেকে অনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।