নামাজ ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ। মুসলমানদের জন্য দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হন। তবে কেবল নামাজ আদায় করলেই যথেষ্ট নয়, বরং ইসলামী শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে “খুশু ও খুজু”-এর—অর্থাৎ মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ পড়ার উপর।
কী এই খুশু ও খুজু?
ইসলামী পরিভাষায়, ‘খুশু’ বোঝায় অন্তরের একাগ্রতা, নম্রতা ও আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ উপস্থিতি। আর ‘খুজু’ হলো বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তা প্রকাশ—যেমন শান্ত ভঙ্গি, নম্র কণ্ঠ, শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টি ও স্থিরতা।
কুরআনে খুশুসম্পন্ন নামাজিদের সফল ঘোষণা করা হয়েছে।
“নিশ্চয়ই সফল তারা, যারা নিজেদের নামাজে খুশু বজায় রাখে।”
(সূরা আল-মুমিনূন: আয়াত ১-২)
বর্তমান বাস্তবতায় খুশু হারানোর কারণ
আধুনিক ব্যস্ত জীবন, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং মানসিক চাপ অনেক মুসলমানের নামাজে খুশু বজায় রাখতে সমস্যার সৃষ্টি করছে। অনেক সময় নামাজ কেবল শারীরিক রুটিনে পরিণত হয়, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এটি আত্মিক সংশোধনের মাধ্যমও।
কীভাবে খুশু অর্জন করা সম্ভব?
ইসলামী আলেমগণ ও গবেষকরা খুশু অর্জনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় পরামর্শ দিয়েছেন:
- নামাজের আগে প্রস্তুতি: মোবাইল ফোন বন্ধ বা সাইলেন্ট রাখা, পরিপাটি পোশাক পরিধান এবং একান্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- নামাজের অর্থ জানা: সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে অন্তরের উপস্থিতি বাড়ে।
- শরীর ও মনে ধীরতা আনা: রুকু ও সিজদা ধীরে সম্পন্ন করা, তাড়াহুড়ো না করা।
- আল্লাহর গুণাবলি নিয়ে ভাবা: নামাজের মধ্যে আল্লাহর মহত্ব ও নিজের ক্ষুদ্রতা অনুধাবন খুশুর পথ খুলে দেয়।
ইসলামি বই ও ফতোয়ায় প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা
বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইবনুল কাইয়্যিম ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থ ও ফতোয়ায় খুশু বৃদ্ধির পন্থা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। “মাজমাউল ফাতাওয়া” সহ একাধিক ইসলামি রেফারেন্সে দোয়া ও আমলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দোয়া যা সহায়তা করতে পারে
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
বাংলা উচ্চারণ: ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম, বিরাহমাতিকা আস্তাগীস, লা ইলাহা ইল্লা আনতা
অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে স্বয়ংভূ, আমি তোমার রহমতের সাহায্য প্রার্থনা করছি, তুমি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই।
এই দোয়া বিশেষ করে চিন্তা ও দুশ্চিন্তায় পড়লে খুশু অর্জনের জন্য সহায়ক হিসেবে আলেমরা উল্লেখ করেছেন।
খুশু ও খুজু কোনো তাৎক্ষণিক অর্জন নয়—বরং ধৈর্য, অনুশীলন এবং আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে এটি অর্জনযোগ্য। ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, একটি উম্মাহর আধ্যাত্মিক উন্নতি শুরু হয় খুশুভরা নামাজ দিয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।