এক সময়ে বড়পর্দা কাঁপানো চিত্রনায়িকা সাইনা শিকদার বনশ্রী। যার ঠাঁই হয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট্ট ঘরে। এটি সিনেমার কোনো গল্প নয়, বরং চরম বাস্তবতা। চিত্র নায়িকা সাইনা শিকদার বনশ্রী এখন এক ছেলে নিয়ে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে মমতাজ আলীর পরিচালনায় সোহরাব রুস্তম সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। এরপর একই বছরে ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মহা ভূমিকম্প’। সুভাষ ঘোষ পরিচালিত এই সিনেমায় দুই নায়ক মান্না ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এরপর নেশা ও ভাগ্যের পরিহাসসহ আরও অনেক সিনেমায় একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্যি, একসময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকা এখন বাস করেন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
চলচ্চিত্রকার ফারুক ঠাকুরের মাধ্যমে সিনেমার জগতে আসেন বনশ্রী। একটি মামলায় ফারুক ঠাকুর গ্রেফতার হলে এই নায়িকার বিরুদ্ধে কুৎসা রটে। ধীরে ধীরে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন প্রযোজকরা। শুরু হয় অভাব আর কষ্টের সংসার। দারিদ্রের কবলে পড়ে বাস করেন রাজধানীর একটি বস্তিতে। কাজবিহীন অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন এই নায়িকা। নিজের পেট চালানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ফুল আর বই বিক্রি করতেন বনশ্রী। সবশেষ তিনি মাদারীপুরের শিবচরের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় পান।
এখনো সময়ে পেলে আশপাশের লোকজনদের নিয়ে করেত চান বিনোদন। ভালো গানও করেন। আনন্দ দেন সবাইকে। বরিশালের ছেলে পারভেজ খানকে বিয়ে করেছিলেন বনশ্রী। ১২ বছর ধরে স্বামী নেন না সংসারের কোনো খবরই। বড় মেয়ে নিখোঁজ কয়েক বছর ধরে। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও উদ্ধার হয়নি বনশ্রীর মেয়েটি। একমাত্র ছেলে মেহেদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে এখন ছোট্ট ঘরে বসবাস এই নায়িকার। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে একজন আদর্শবান চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা।
অবসর সময়ে সরকারি এই ছোট্ট ঘরে বসেই সেলাই মেশিনে করেন দর্জির কাজ। নিজে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার পাশাপাশি নারীদের জন্য একটি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার স্বপ্ন দেখেন বনশ্রী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার গুয়াতলা এলাকায় বাবা মজিবর শিকদার ও মা সবুরজান রিনা বেগমের ঘরে ১৯৭৪ সালের ২৩ আগস্ট জন্ম নেয় এ নায়িকা। বর্তমানে শিবচর উপজেলার মাদবরেরচরের সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে থাকেন তিনি। দুঃস্থ শিল্পী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেন এককালীন ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। সেখান থেকে মাসে ১৭ হাজার ২৮০ টাকার সুদ পেলেও দ্রব্যমূল্যের বাজারে টিকে থাকা দায়।
দুর্দিনে বনশ্রী পাশে পাননি আত্মীয়-স্বজনকেও। পর্দা কাঁপানো এই নায়িকার বাসস্থান ছোট্টঘরে, বিষয়টিতে হতবাক এলাকাবাসীও। দুর্দিনে পাশে দাঁড়াবে সমাজের বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকার, এমনটাই চাওয়া সবার।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘বনশ্রীকে ছোট্ট সময়ে সিনেমার পর্দায় দেখতাম। এখন সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। তার এই সময়ে সরকার যদি সব ধরনের সহযোগিতা করে, তাহলে তিনি আরও ভালো থাকতে পারবেন।’
সাইনা শিকদার বনশ্রী বলেন, ‘বয়সের কারণে জৌলুস কিছু কমে গেছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু অভিনয়ের সম্মানী দিয়ে যাতায়াতের অর্থও হয় না বলে অভিনয় থেকে কিছুটা সরে এসেছি। এখন আশ্রয়ণের ঘরে ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছি।। নারীদের জন্য একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার স্বপ্ন আছে। আর ছেলেকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।