
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধদের স্বজনদের আহাজারি যেন থামছেই না। রাত থেকেই তারা ভিড় করে আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। কিছুক্ষণ পরপরই দগ্ধ রোগীকে দেখে আহাজারি করতে করতে হাসপাতালের ভেতর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন একেকজনের স্বজন।
ইনস্টিটিউটের ওয়েটিং চেয়ারে বসে চোখের পানি মুছছিলেন মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার ছোট দুই বোনজামাই ওই মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
মনির হোসেন বলেন, ‘ছোট দুই বোনজামাই আমজাদ ও ইমাম হোসেনের বাসা ওই মসজিদের পাশেই। কাল একই সঙ্গে ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা দুজনই দগ্ধ শরীর নিয়ে দৌড়ে বাসায় আসে।’
তিনি বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স করে রাতেই বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। এখানে ভর্তি করার পর এখনো তাদেরকে দেখতে পাইনি। তাদের কী অবস্থা তাও জানি না।’
দগ্ধ দুই ছেলের সঙ্গে রাত থেকেই হাসপাতালে কাটাচ্ছেন বাবা নুর উদ্দিন মুন্সি। বড় ছেলে মো. সাব্বিরের (২১) মৃত্যুর খবরটি জানতে পারলেও ছোট ছেলে যুবায়েরের খবর জানেন না তিনি।
নুর উদ্দিন বলেন, ‘বড় ছেলে সাব্বির নারায়ণগঞ্জ কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করে। আর ছোট ছেলে নারায়ণগঞ্জে সরকারি তোলারাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়ে। ঘটনার সময় বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে ছোট আরেক ভাই ইয়াসিনও (১২) ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তিনজনই একসঙ্গে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। তবে ইয়াসিন পেছনের সারিতে দাঁড়ানোর কারণে বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সে দগ্ধ হয়নি।’
নুর উদ্দিন বলেন, ‘যুবায়েরের মৃত্যুর কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আমাদের এখনো কেউ কিছু বলেনি। আমরা জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারছি না।’
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লার বাইতুছ সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ শেষে মোনাজাত চলাকালে বিস্ফোরণ হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। তারা হলেন- মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), যুবায়ের (৭), রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮) সাব্বির (২১), রাশেদ (৩৪) ও কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২)।
প্রাথমিকভাবে মসজিদের ছয়টি এসি একযোগে বিস্ফোরিত হয় বলে জানা গেছে। মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিক থেকে এ বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।