সকাল সাতটা। অফিসের প্রস্তুতি, স্কুলে যাওয়া সন্তানের টিফিন বক্স, বাসার নাস্তার ব্যবস্থা—এই সমস্তের মধ্যেই মিতার চোখ আটকে যায় আয়নায়। নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবেন, “কবে শেষবার নিজের জন্য সময় নিয়েছিলাম?” হঠাৎ মনে পড়ে গত সপ্তাহে ডাক্তারের কথাটা—”ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়বে।” মায়ের হাতে বানানো সেই মিহি পুতুল গালের শৈশব এখন ধূসর ক্লান্তিতে ঢাকা। শহুরে এই যুদ্ধক্ষেত্রে লাখো মিতা প্রতিদিন নিজেকে ভুলে যান। কিন্তু জানেন কি? নারীদের ফিটনেস রুটিন: শুরু করার সহজ উপায় শুনতে যতটা কঠিন, বাস্তবে তা একেবারেই নয়! ঢাকার গুলশান লেকের পাশে সকালে হাঁটতে আসা কর্মজীবী নাজনীন আক্তারের কথায়, “দিনে মাত্র ২০ মিনিটও যদি নিজেকে দিই, পুরো দিনের এনার্জি পাল্টে যায়।” আসুন, জেনে নিই কীভাবে অসময়, সংকোচ বা অজ্ঞতাকে জয় করে আপনি তৈরি করতে পারেন নিজের জন্য একটি টেকসই ফিটনেস যাত্রাপথ।
নারীদের ফিটনেস রুটিন: শুরু করার সহজ উপায় – কেন জরুরি আপনার জন্য?
বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু বেড়ে ৭৪.৩ বছর হলেও স্বাস্থ্যবতী জীবনযাপনের হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ২৫-৪০ বছর বয়সী শহুরে নারীদের মধ্যে ৬৮% শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে এই নিষ্ক্রিয়তাই প্রধান ভূমিকা রাখছে। শুধু শারীরিক নয়; মানসিক চাপ, উদ্বেগ, পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের মতো সমস্যাগুলোর সঙ্গেও ফিটনেসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে গ্রামীণ নারীদের নিয়ে কাজ করা ডায়েটিশিয়ান ডা. ফারহানা হকের মতে, “ফিটনেস মানে শুধু ওজন কমানো নয়। এটি নারীর আত্মবিশ্বাস, উৎপাদনশীলতা এবং পারিবারিক সুস্থতার ভিত্তি তৈরি করে।”
কিন্তু সমস্যা কোথায়? প্রথমত, সময়ের অভাব। দ্বিতীয়ত, সামাজিক সংকোচ—জিমে যাওয়া বা প্রকাশ্যে ব্যায়াম করাকে অনেক পরিবারে এখনও “অনুচিত” মনে করা হয়। তৃতীয়ত, সঠিক তথ্যের অভাব—অনেকেই জানেন না কীভাবে শুরু করবেন, কোন ব্যায়াম নিরাপদ। চতুর্থত, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা—জিম মেম্বারশিপ বা ট্রেনারের খরচ অনেকের পক্ষে বহন করা কঠিন। এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ঘরোয়া ফিটনেস রুটিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, “দিনে মাত্র ৩০ মিনিটের মাঝারি ধরনের ব্যায়াম—যেমন দ্রুত হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা সাইকেল চালানো—নারীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমাতে পারে।” সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বড় কথা হলো টেকসই স্বাস্থ্য। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ নারীই পারেন পরিবার ও সমাজের ভিত মজবুত করতে।
প্রথম ধাপ: মানসিক প্রস্তুতি ও ছোট্ট লক্ষ্য নির্ধারণ
ফিটনেস যাত্রা শুরু হয় মনের জোর থেকে, জিমের মেশিন থেকে নয়! মানসিক বাধা ভাঙাই প্রথম সাফল্য। ঢাকার ডhanmondi Lake-এ নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন এমন গৃহিণী তাহমিনা আক্তার বলেন, “প্রথম দু’সপ্তাহ শুধু নিজেকে বলতাম—’আমি পারব’। ভোর ৫টায় ঘুম ভাঙানো সহজ ছিল না, কিন্তু এখন শরীর নিজেই জাগে।” কীভাবে মানসিক প্রস্তুতি নেবেন?
- নেতিবাচক চিন্তা দূর করুন: “আমার সময় নেই”, “বয়স হয়ে গেছে”—এসব ভাবনা সরিয়ে ফেলুন। গবেষণা বলছে, সপ্তাহে মাত্র ১৫০ মিনিট ব্যায়ামেই বিপুল পরিবর্তন আসে।
- অতি উচ্চাশা নয়: প্রথম মাসেই ১০ কেজি ওজন কমালাম—এমন টার্গেট না রাখাই ভালো। বরং লক্ষ্য রাখুন: “প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটব”, “সপ্তাহে তিনবার স্ট্রেচিং করব”।
- অনুপ্রেরণা খুঁজুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সারদের ফলো করুন যারা বাস্তবসম্মত টিপস দেন। যেমন—বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফিটনেস ট্রেনার সাদিয়া পারভিনের ‘Home Workout for Moms’ সিরিজ।
স্মার্ট গোল সেটিং হলো সফলতার চাবিকাঠি। SMART মানে হলো:
- Specific (নির্দিষ্ট): “ওজন কমানো” নয়, বরং “সপ্তাহে ৪ দিন ২০ মিনিট হাঁটা”।
- Measurable (পরিমাপযোগ্য): ফিটনেস ব্যান্ড বা মোবাইল অ্যাপ (MyFitnessPal) দিয়ে ট্র্যাক করুন।
- Achievable (অর্জনযোগ্য): অফিসের পর ১ ঘণ্টা জিম সম্ভব না হলে, সকালে ১৫ মিনিট সূর্য নমস্কার করুন।
- Relevant (প্রাসঙ্গিক): ডায়াবেটিস থাকলে কার্ডিও গুরুত্বপূর্ণ, আর্থ্রাইটিস থাকলে স্ট্রেচিং।
- Time-bound (সময়সীমাযুক্ত): “৩ মাসে ৫ কেজি ওজন কমাব”।
চট্টগ্রামের কর্পোরেট প্রফেশনাল নুসরাত জাহানের অভিজ্ঞতা: “প্রথম মাসে শুধু লক্ষ্য ছিল দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা আর সিঁড়ি দিয়ে অফিসে ওঠা। ছোট এই জয়গুলোই পরে বড় পরিবর্তনের ভিত্তি হয়েছিল।”
বাজেট-বান্ধব সরঞ্জাম ও ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি
ফিটনেস রুটিন মানেই costly equipment নয়! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাশ্রয়ী উপায়ে কীভাবে প্রস্তুত হবেন?
জরুরি সরঞ্জাম:
- ইয়োগা ম্যাট (৳৫০০-১০০০): কার্পেট বা শক্ত মেঝেতে ব্যায়ামে ইনজুরির ঝুঁকি কমায়।
- রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড (৳২০০-৫০০): ওজন তোলার বিকল্প, সহজে বহনযোগ্য।
- পানির বোতল (Reusable): হাইড্রেশন বজায় রাখা জরুরি।
- স্ট্রেচেবল কাপড়: সুতি সালোয়ার-কামিজ বা ট্র্যাকসুটই যথেষ্ট।
ঘরকে ট্রান্সফর্ম করুন:
- জায়গা বের করুন: বারান্দার এক কোণ, শোবার ঘরের ফাঁকা জায়গা (২m x ১m যথেষ্ট)।
- মিরর ব্যবহার: পুরনো আলমারির দরজার আয়নায় ফর্ম চেক করুন।
- মোটিভেশনাল কর্নার: পোস্টার, ইনস্পিরেশনাল কোটস সেঁটে দিন। খুলনার গৃহিণী রোকেয়ার ড্রয়িং রুমের এক পাশে ছোট্ট ফিটনেস জোনে লেখা—”আজকের প্রচেষ্টাই আগামীর সুস্থতা।”
মোবাইল অ্যাপ ও ফ্রি রিসোর্স:
- YouTube: FITTR Bangla, Fitness With Mim, Yoga With Adriene (বাংলা সাবটাইটেলসহ)।
- অ্যাপস: Nike Training Club (বিনামূল্যে কাস্টমাইজড প্ল্যান), MyFitnessPal (ক্যালরি ট্র্যাকিং)।
- ফ্রি ওয়েবিনার: Bangladesh Women’s Health Initiative-র মাসিক অনলাইন সেশন।
সতর্কতা: ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, গর্ভাবস্থা বা হাঁটুর ব্যথা থাকলে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন: www.bdphysio.org.bd
সহজ স্টেপে সপ্তাহের রুটিন: শুরু যেভাবে করবেন
প্রথম সপ্তাহের নমুনা প্ল্যান (মোট ২০-৩০ মিনিট/দিন):
দিন | কার্ডিও (১০ মিনিট) | স্ট্রেচিং/স্ট্রেন্থ (১০ মিনিট) | বিশেষ টিপস |
---|---|---|---|
সোমবার | দ্রুত হাঁটা (বাসায়/ছাদে) | কাঁধ, ঘাড়, পিঠের স্ট্রেচ | হাঁটার সময় গান শুনুন |
মঙ্গলবার | সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা (৩ বার) | ওয়াল পুশ-আপ (১০ বার) | পানি পান ৮ গ্লাস লক্ষ্য করুন |
বুধবার | রেস্ট/হালকা স্ট্রেচিং | গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম (৫ মিনিট) | মন শান্ত করুন |
বৃহস্পতি | জগিং স্থানে দাঁড়িয়ে (Marching) | স্কোয়াট (চেয়ার ব্যবহার করে, ১২ বার) | আয়নায় ফর্ম দেখুন |
শুক্রবার | নাচ (পছন্দের গানে!) | প্ল্যাঙ্ক (১০ সেকেন্ড ধরে ৩ সেট) | পরিবারের সাথে করুন |
শনিবার | পার্কে হাঁটা (পারিবারিক) | রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ডে বাইসেপ কার্ল (১০ বার) | প্রকৃতির সংস্পর্শে আসুন |
রোববার | এক্টিভ রেস্ট—হালকা ইয়োগা বা মেডিটেশন | সপ্তাহের অর্জন মূল্যায়ন করুন |
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যোগ করুন:
- কার্ডিও সময় বাড়ান ১৫ মিনিটে।
- স্কোয়াট, পুশ-আপের সংখ্যা বাড়ান (২-৫টি করে)।
- নতুন ব্যায়াম যোগ করুন—যেমন: লাঞ্জেস, গ্লুট ব্রিজ।
- সপ্তাহে ১ দিন “ফান ডে”—জুম্বা ডান্স বা সাঁতার।
খাওয়ার রুটিনে সহজ পরিবর্তন:
- সকাল: ১ গ্লাস গরম পানিতে লেবু + ১ ঘণ্টা পর ২টি ডিম ও রুটি।
- দুপুর: ভাতের পরিমাণ অর্ধেক করে সবজি/ডাল বাড়ান। ঢাকার পুষ্টিবিদ তানজিনা তাসনিমের পরামর্শ—“প্লেটের অর্ধেক রাখুন সবুজ শাকসবজি, এক-চতুর্থাংশ প্রোটিন (মাছ/ডাল), বাকিটা কার্বোহাইড্রেট।”
- রাত: হালকা খাবার—সূপ ও গ্রিল্ড চিকেন/টক দই।
- স্ন্যাকস: ফল, বাদাম, সিদ্ধ ছোলা।
সাফল্যের গোপন মন্ত্র:
- কনসিসটেন্সি > ইনটেনসিটি: প্রতিদিন সামান্য করলেও নিয়মিত করুন।
- সকালের রুটিন: ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস পানি + ১০ মিনিট সান স্যালুটেশন (সূর্য নমস্কার)।
- অ্যাকাউন্টেবিলিটি পার্টনার: বন্ধু/পারিবারিক সদস্যকে সাথে নিন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোগ্রেস শেয়ার করুন।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: বিরতি, একঘেয়েমি ও প্রেরণা হারানো
স্ট্যাগনেশন বা থামে যাওয়া: অনেকেই ৩-৪ সপ্তাহ পর হতাশ হন যখন ওজন কমে না বা শক্তি বাড়ে না। মনে রাখবেন—“নন-স্কেল ভিক্টোরিজ” (যেসব সাফল্য ওজনে ধরা পড়ে না) কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ:
- ঘুমের মান উন্নত হয়েছে
- কাজে মনোযোগ বেড়েছে
- পিঠব্যথা কমেছে
- পোশাকে ফিট আসছে
একঘেয়েমি দূর করতে:
- মিউজিক প্লেলিস্ট আপডেট করুন: বিভিন্ন মুডের জন্য আলাদা প্লেলিস্ট।
- ভ্যারাইটি যোগ করুন: সপ্তাহে একদিন পার্কে ব্যায়াম, একদিন YouTube-এর নতুন ভিডিও ট্রাই করুন।
- কমিউনিটি জয়েন করুন: Facebook গ্রুপ যেমন ‘Bangladeshi Women Fitness Warriors’ বা স্থানীয় পার্কের গ্রুপ এক্সারসাইজ।
প্রেরণা ধরে রাখার কৌশল:
- ভিজুয়াল ট্র্যাকার: ক্যালেন্ডারে স্টিকার লাগান প্রতি সফল দিনে।
- রিওয়ার্ড সিস্টেম: দুই সপ্তাহ টানা রুটিন শেষে নিজেকে গিফট দিন—নতুন বই, স্পা সেশন।
- রোল মডেল: দেশি উদাহরণ দেখুন—যেমন জাতীয় ক্রিকেটার জাহানারা আলমের ফিটনেস জার্নি।
সিলেটের স্কুলশিক্ষক ফারজানা আক্তারের উক্তি প্রণিধানযোগ্য: “মাঝে মধ্যেই মন ভেঙে যেত। তখন ফিটনেস ডায়েরিতে পুরনো নোট পড়ি—’গত মাসে ৫ মিনিট হাঁটলে হাঁপিয়ে যেতাম, আজ ৩০ মিনিট হাঁটি!’ এই তুলনাই নতুন শক্তি দেয়।”
গর্ভাবস্থা ও মেনোপজ: বিশেষ সময়ে বিশেষ ফিটনেস
গর্ভাবস্থায় ফিটনেস (ডাক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে):
- প্রথম ত্রৈমাসিক: হালকা ওয়াকিং, প্রিনাটাল ইয়োগা (বিকেলের দিকে, যখন বমিভাব কম)।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক: সাঁতার, প্রেগনেন্সি সেফ পিলাটেস (পিঠে চাপ দেবেন না)।
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক: গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ (কেগেলস)।
- এড়িয়ে চলুন: জাম্পিং, পেট চাপ পড়ে এমন পোজ।
মেনোপজ পরবর্তী ফিটনেস:
- ওজন প্রশিক্ষণ: হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সপ্তাহে ২ দিন (ডাম্বেল/রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড)।
- ব্যালেন্স এক্সারসাইজ: টাই চি বা যোগাসন, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে।
- কার্ডিও: সাইক্লিং, ব্রিস্ক ওয়াকিং (সন্ধ্যায় হরমোনাল ফ্লাশ কম থাকে)।
- খাদ্যতালিকায়: ক্যালসিয়াম (দুধ, দুগ্ধজাত), ভিটামিন ডি (সূর্যালোক) বাড়ান।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: গাইনি ডা. সায়মা আহসান (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) বলছেন, “গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজে ফিটনেস রুটিন শারীরিক পরিবর্তন মোকাবিলা করে, অবসাদ দূর করে। কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের গ্রিন সিগনাল নিন।”
বয়স ভেদে ফোকাস: কিশোরী থেকে প্রবীণ নারী
কিশোরী (১৩-১৯ বছর):
- ফোকাস: হাড় ও পেশির বিকাশ, পোস্টার উন্নতি।
- রুটিন: স্কিপিং, ডান্স, স্পোর্টস (ভলিবল, ব্যাডমিন্টন)।
- সতর্কতা: ওভার-ট্রেনিং এড়িয়ে চলুন, পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।
কর্মজীবী নারী (২০-৪৫ বছর):
- ফোকাস: স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, পিসিওএস/থাইরয়েড ম্যানেজমেন্ট।
- রুটিন: অফিসে ডেস্ক স্ট্রেচিং, লাঞ্চ ব্রেকে ১০ মিনিট ওয়াক।
- টিপ: স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার বা প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট হাঁটুন।
প্রবীণ নারী (৫৫+ বছর):
- ফোকাস: জয়েন্ট মোবিলিটি, ব্যালেন্স, হাড়ের স্বাস্থ্য।
- রুটিন: জল ব্যায়াম (aqua aerobics), চেয়ার ইয়োগা, হাঁটা।
- গুরুত্বপূর্ণ: ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলুন, হাইড্রেশন বজায় রাখুন।
স্থায়ী অভ্যাস গড়ে তোলার বিজ্ঞান
হ্যাবিট ফরমেশন তত্ত্ব (২১/৯০ রুল):
- ২১ দিন: প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন একই সময়ে/স্থানে ব্যায়াম করুন (সকাল ৭টা/বিকেল ৫টা)।
- ৯০ দিন: তিন মাস পর এটি স্বয়ংক্রিয় অভ্যাসে পরিণত হয়।
- ট্রিগার ব্যবহার করুন: যেমন—চা খাওয়ার পর = ১৫ মিনিট স্ট্রেচিং।
ব্যর্থতা মোকাবিলা:
- মিস করলে নিজেকে দোষ দেবেন না। পরের দিন আবার শুরু করুন।
- কারণ বিশ্লেষণ করুন: “গতকাল কাজের চাপে মিস করেছি, আজ অফিস থেকে ফেরার পথে পার্কে ১০ মিনিট হাঁটব।”
- ৮০/২০ রুল: সপ্তাহের ৮০% সময় রুটিন মেনে চললেই সফল।
দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের চাবি:
- শারীরিক সক্ষমতা বাড়ার আনন্দ: আগে যা পারতেন না, এখন পারছেন—এটাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রতি ৬ মাসে BMI, ব্লাড সুগার চেক করুন—সংখ্যাগুলো উন্নতি দেখাবে।
- কমিউনিটি সাপোর্ট: স্থানীয় মহিলা ফিটনেস ক্লাব বা অনলাইন গ্রুপে যুক্ত হোন।
> আপনার যাত্রা আজই শুরু হোক! মনে রাখবেন, নারীদের ফিটনেস রুটিন: শুরু করার সহজ উপায় খুঁজে পাওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রথম পা ফেলা। এই মুহূর্তে উঠে দাঁড়ান, জুতোর ফিতা বাঁধুন, এবং জানালার পাশে হালকা স্ট্রেচিং দিয়ে শুরু করুন। আপনার শরীরই আপনার প্রথম বাড়ি—একে যত্ন দিন, সুস্থ রাখুন। কাল নয়, আজই বলুন: “আমার সময় এখন!”
জেনে রাখুন
প্রশ্ন: নারীদের ফিটনেস রুটিন শুরু করতে প্রতিদিন কত সময় ব্যয় করা উচিত?
উত্তর: শুরুতে মাত্র ১৫-২০ মিনিটই যথেষ্ট। মূল লক্ষ্য হলো নিয়মিততা বজায় রাখা। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৩০-৪৫ মিনিটে নিয়ে আসুন। গবেষণা অনুযায়ী, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়াম (যেমন: দ্রুত হাঁটা) স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। সময়ের অভাবে ভুগলে দিনকে কয়েকটি ছোট সেশানে ভাগ করে নিন—সকালে ১০ মিনিট স্ট্রেচিং, বিকেলে ১০ মিনিট ওয়াকিং।
প্রশ্ন: পিরিয়ডের সময় ফিটনেস রুটিন বন্ধ রাখা কি জরুরি?
উত্তর: মোটেই না! পিরিয়ডের সময় হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম (যেমন: ওয়াকিং, ইয়োগা, স্ট্রেচিং) ব্যথা কমাতে ও মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে তীব্র ক্র্যাম্প বা রক্তস্রাব বেশি হলে বিশ্রাম নিন। ভারী ওজন তোলা বা উচ্চ-তীব্রতার কার্ডিও এড়িয়ে চলুন। শরীরের সংকেতকে গুরুত্ব দিন—সেই দিনের জন্য হালকা এক্টিভিটি বেছে নিন।
প্রশ্ন: ঘরে বসে নারীদের ফিটনেসের জন্য কোন তিনটি সহজ ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর?
উত্তর: প্রথমত, সূর্য নমস্কার (ইয়োগা সিকোয়েন্স)—পুরো শরীর এক্টিভেট করে, ১০ মিনিটেই করা যায়। দ্বিতীয়ত, স্কোয়াটস—পায়ের শক্তি, গ্লুটস ও ব্যালেন্স উন্নত করে। তৃতীয়ত, প্ল্যাঙ্ক—কোর স্ট্রেন্থ, পিঠের স্বাস্থ্য ও পোস্টার উন্নত করে। এই তিনটি ব্যায়াম কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই করা সম্ভব এবং সপ্তাহে ৪-৫ দিন অনুশীলন করলে দ্রুত ফল মেলে।
প্রশ্ন: ফিটনেস রুটিনের পাশাপাশি ডায়েট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: ফিটনেসে ৭০% হলো পুষ্টি, ৩০% ব্যায়াম। ব্যায়ামের সুফল পেতে ব্যালেন্সড ডায়েট অপরিহার্য। প্রোটিন (ডিম, মাছ, ডাল), জটিল কার্বস (লাল চাল, ওটস), স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (আভোকাডো, বাদাম) ও ফাইবার (শাকসবজি, ফল) সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। ভাজাপোড়া, প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন। পানি পান অবশ্যই পর্যাপ্ত করুন (দিনে ২-৩ লিটার)।
প্রশ্ন: ফিটনেসে দ্রুত ফল পেতে কী কী ভুল এড়ানো উচিত?
উত্তর: প্রথম ভুল—ধৈর্য হারানো। ফল পেতে ৪-৬ সপ্তাহ সময় লাগে। দ্বিতীয় ভুল—ওভারট্রেনিং। শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে ইনজুরি বা ক্লান্তি আসে। তৃতীয় ভুল—শুধু কার্ডিও করা। ওজন কমানো বা টোনিংয়ের জন্য স্ট্রেন্থ ট্রেনিং জরুরি। চতুর্থ ভুল—জলখাবার এড়িয়ে যাওয়া। ব্যায়ামের পর ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রোটিন-কার্ব সমৃদ্ধ স্ন্যাকস (ডিম সাদা+ওটস) খান।
প্রশ্ন: বাচ্চা হওয়ার পর ফিটনেস রুটিন কীভাবে শুরু করব?
উত্তর: প্রসবের ৬ সপ্তাহ পর (নরমাল ডেলিভারি) বা ৮-১০ সপ্তাহ পর (সিজারিয়ান) ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে শুরু করুন। প্রথমে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ (কেগেলস) ও গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম দিয়ে সূচনা করুন। পরে হালকা ওয়াকিং, পোস্টনেটাল ইয়োগা যোগ করুন। বাচ্চাকে স্ট্রোলারে নিয়ে পার্কে হাঁটুন। দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য ক্যালোরি ইনটেক পর্যাপ্ত রাখতে হবে—কখনই ডায়েট করবেন না।
> আপনার স্বাস্থ্য আপনার দায়িত্ব। এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য সাধারণ নির্দেশিকা মাত্র। ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা, বয়স ও চিকিৎসা ইতিহাসের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা, ক্রনিক অসুস্থতা বা বয়স ৪০+ হলে প্রফেশনাল গাইডেন্স অপরিহার্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।