জুমবাংলা ডেস্ক: শুরুতেই সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক বাজার সম্পর্কে। যেমন- বাজার এমনি একটি লেনদেন পদ্ধতি, সংস্থা, সামাজিক সম্পর্ক অথবা পরিকাঠামো যেখানে মানুষ বস্তু বা অন্য কর্ম-দক্ষতা বিনিময় করে সামগ্রিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করে। এটি ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী একটি কর্ম ব্যবস্থা।
এবার শুরু করা যাক নারীদের জন্য বিশেষায়িত বাজারের ইতিহাস-
খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাজার সাধারণত খোলা ও উন্মুক্ত হতো। কিন্তু সে সময় দিল্লির লালকেল্লায় একটি আচ্ছাদিত বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা ছিল নারীদের জন্য বিশেষায়িত একটি বিক্রয়কেন্দ্র। সম্রাট শাহজাহান ধনুকাকৃতির এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধারণা করা হয়, ১৬৪৬ সালে পেশওয়ারে তিনি এমন একটি বাজার দেখে অনুপ্রাণিত হন, যা নির্মাণ করেছিলেন আলী মরদান খান। দিল্লির লালকেল্লা নির্মাণের সময় শাহজাহান এর তত্ত্বাবধায়ক মুকারমাত খানকে অনুরূপ একটি বাজার তৈরির নির্দেশ দেন। দিল্লির উষ্ণ আবহাওয়ার উপযোগী নকশায় তৈরি হওয়ায় শাহজাহান অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন।
বর্তমানে বাজারটি ‘ছাত্তা চকবাজার’ বা ‘মিনাবাজার’ নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ‘বাজার-ই-মুসাক্কাফ’ বা ছাদবিশিষ্ট বাজার। লালকেল্লার লাহোরি গেটের পাশেই অবস্থিত। সম্ভবত কেল্লায় প্রবেশের প্রধান ফটকের পাশে এই বাজার প্রতিষ্ঠার বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল সম্রাট শাহজাহানের। তিনি মোগল সাম্রাজ্যের ক্রমবর্ধমান সম্পদ, শক্তি ও প্রতিভা প্রদর্শনের উপলক্ষ বানিয়েছিলেন বাজারটিকে। নওবতখানা ও দেওয়ানে আমের সঙ্গে এই বাজারে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। লাহোরি গেট দিয়ে হেঁটে সহজেই দোতলা তোরণে পৌঁছা যায়। ছত্তর মনজিল নামের এই তোরণ বাজারকে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত করেছে এবং এর মাধ্যমেই প্রাকৃতিক বাতাস ও সূর্যালোক প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাজারের স্থাপনায় ছিল আকর্ষণীয় নকশা ও কারুকাজ। দীর্ঘাকৃতির বাজারের প্রতি পাশে ছিল দুই কক্ষবিশিষ্ট ৩২টি দোকান, যার এক কক্ষে পণ্য বিক্রি করা হতো এবং অপর কক্ষে পণ্য উৎপাদন, গুদামজাতকরণ ও ব্যাবসায়িক লেনদেন করা হতো। দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলো সম্ভবত দাফতরিক কাজে ব্যবহার করা হতো। এটি ছিল সে সময়ের সমৃদ্ধ ও বিলাসী বাজার। যেখানে সম্রাট ও অভিজাত পরিবারের সদস্যরা কেনাকাটা করত। মিনাবাজারে তখন উন্নত মানের কার্পেট, মাদুর, জাজিম, শতরঞ্জি, তাকিয়া, লেপ-তোশক, শাহতুক ও পশমিনা শাল, কাপড়, পর্দা, জরি ও এমব্রয়ডারি, সিল্ক, উল, মখমল, তাফিকাস ইত্যাদি পোশাক পাওয়া যেত, যা ছিল মোগলদের নিত্যব্যবহার্য। এ ছাড়া মূল্যবান রত্নপাথর, দেশি-বিদেশি গয়না, স্বর্ণ-রৌপ্যের আসবাব, সূক্ষ্ম কারুকাজবিশিষ্ট কাঠ ও হাতির দাঁতের তৈজসপত্র, পিতল ও তামার জিনিসপত্র, সুগন্ধি ও মসলা পাওয়া যেত মিনাবাজারে। দিল্লির সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় বাজার চাঁদনী চকেও এত জিনিসের আয়োজন ছিল না।
যদিও সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলসহ সম্রাট শাহজাহানের মাত্র তিনজন স্ত্রী ছিলেন। তারপর তিনি হেরেমের নারীদের কথা চিন্তা করেই এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যারা সাধারণত দুর্গের বাইরে বের হতেন না। তাদের কোনো প্রয়োজন হলে ব্যবসায়ীদের রাজমহলে ডেকে পাঠাতেন। অবশ্য নারীদের কেনাকাটার জন্য নির্ধারিত দিন ছিল। সপ্তাহের নির্ধারিত যে দিন তারা বাজারে প্রবেশ করতেন, তখন পুরুষদের অত্র এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। নারীরা বাজারে গেলে ব্যবসায়ীদের স্ত্রীরা তাদের স্বাগত জানাতেন।
নারীদের জন্য বিশেষায়িত বাজারের সূচনা করেছিলেন সম্রাট হুমায়ুন। নববর্ষ উপলক্ষে পাঁচ থেকে আট দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হতো। যেখানে সম্রাট ও রাজকুমাররা ছাড়া আর কোনো পুরুষ প্রবেশের অনুমতি পেত না। পরবর্তী সময়ে সম্রাট আকবর আরো বৃহৎ পরিসরে এই মেলার আয়োজন করেন। সম্রাট শাহজাহান এই নারীদের জন্য বিশেষায়িত বাজারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।
সূত্র : ডেকান হেরাল্ড, লাইভ ইন্ডিয়া ডটকম ও উইকিপিডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।