মো. আজিজুর রহমান: আমরা জানি বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রায়ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। অবশ্য সকল ক্ষেত্রেই নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথেই দেখে আসছে বর্তমান সরকার। আর এটি শুরু হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই।
১৯৭২ সালে জাতির পিতার সদিচ্ছা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ স্থাপিত হয়। বোর্ডের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৪ সালে এটিকে ‘নারী পুনর্বাসন কল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এ উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থাকে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে রূপদান করা হয়।
নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় মহিলা সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরেও বর্তমানে এর অধীন পৃথক দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। একটি হলো “তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প” এবং আরেকটি “তথ্য আপা প্রকল্প”। আজ এ দুটি প্রকল্পের কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতাই শেয়ার করব।
১। “তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার, অদক্ষ, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পেশাগত উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় এই প্রকল্পের প্রস্তাবিত বিক্রয় কেন্দ্রগুলিতে তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করারও সুযোগ রয়েছে। তাই এই প্রকল্পটি সরাসরি দেশে এবং বিদেশে নারীর পণ্য বিপণনের সাথে জড়িত।
ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের তিনটি পর্যায় ২০২০ সালে সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এতে সর্বমোট ৭১,৫০০ জনকে প্রায় ১২০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৪র্থ পর্যায়ে কালীগঞ্জসহ মোট ৮০ টি উপজেলায় সর্বমোট ২,৫৬,০০০ জনকে এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে যা ২০২৫ সালে শেষ হবে।
এবার আসি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কিছু তথ্য নিয়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে মোট ২৮,৫০,৩০০/- (আটাশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার তিনশত টাকা) প্রশিক্ষণ ভাতা বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে কালীগঞ্জে মোট ১৫০০ জনকে ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন, ক্যাটারিং, বিউটিফিকেশন, ইন্টেরিওর ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট—এই ৫টি ট্রেড বা ক্যাটাগরিতে এই প্রশিক্ষণটি সফলভাবে চলমান॥
২। “তথ্য আপা প্রকল্প”
নারীর ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত উদ্যোগ হচ্ছে “তথ্য আপা প্রকল্প”। বাংলাদেশের গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদান নি:সন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে। এ লক্ষ্যেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন” শীর্ষক প্রকল্পটি এক প্রকার পাইলট আকারেই গৃহীত হয়েছিল। উক্ত প্রকল্পটি ১ম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে পরবর্তীতে সকল উপজেলায় তৃণমূল নারীদের নিকট পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদী “তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)” চালু হয় যা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো নিয়মিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীদের নিকট তথ্যসেবা পৌঁছে দেয়া।
তথ্য কেন্দ্রসমূহ হতে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থসেবা যেমন ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। ডোর টু ডোর সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মুক্ত আলোচনা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ছাড়াও এখান থেকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০১৯ হতে ২০২৩ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উঠান বৈঠক এর সংখ্যা ৬৮ টি এবং উঠান বৈঠকে উপকারভোগীর সংখ্যা ৪,৭৫০ জন ।
পরিশেষে আমার মতে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর যে মেন্ডেট দিয়েছে সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব অনেকখানিই কাঁধে তুলে নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা।
লেখক: ৩৪তম বিসিএস ক্যাডার (প্রশাসন)
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
কালীগঞ্জ, গাজীপুর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।