জুমবাংলা ডেস্ক: স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে জন্মের পর ভূ-খ-টিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে উল্লেখকারি সেই আমেরিকাও আজ বাংলাদেশের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী। আরও বর্তমান স্পিকারও নারী। তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি। মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্যও নারী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। নির্বাচিত হয়ে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সংস্থা/কার্যালয়ে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা। বাংলাদেশের জন্য এটি বড় অর্জন। ভবিষ্যতে দেশের প্রধান বিচারপতিসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীরা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের নারীদের ব্যাপক সামাজিক উন্নয়নের কথা বলেছেন। যা আমাদের জন্য বেশ আনন্দের ও গর্বের।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশজুড়ে নারীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। অর্জন সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, মতপ্রকাশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে কায়রো ও বেইজিংয়ে নারী সম্মেলন হয়। উভয় সম্মেলনে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে কতগুলো পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এসব পরিকল্পনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল অন্যতম। এরই ধারাবাহিকতায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় ৯৮ শতাংশ শিশু ভর্তি হচ্ছে। দেশের দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে।
বেড়েছে মাথাপিছু আয়। সাড়ে সাত লাখ নারী প্রতি মাসে ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, প্রাথমিক শিক্ষায় কন্যাশিশুদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, নারী-পুরুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও-ও নারীর উন্নয়নে কাজ করছে। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন গেল বছর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভারতসহ বাংলাদেশের পাশের রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে বেশি এগিয়েছে। কিন্তু নারীর সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।’
বিগত ২০ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। এ বিষয়ে নারীনেত্রী আয়শা খানম বলেন, ভিয়েনা ও কায়রো সম্মেলন হতে ১০০ বছর লেগেছে। শুধু ৫০ বছর লেগেছে নারীর অধিকার মানবাধিকার-এই কথার স্বীকৃতি পেতে। বিমান পরিচালনা, প্যারাস্যুট জাম্পিং, হিমালয়ের চূড়া কোথায় নারী নেই। গত ২০ বছরে আমাদের পিলারের মতো অর্জন আছে। নারী নিজে ঘর থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নারী তা করেছেন তার অর্থনৈতিক প্রয়োজনে। গার্মেন্টসে কেউ নারীদের পাঠায়নি, সরকারও বলেনি। নারী বেঁচে থাকার জন্য ছুটে এসেছেন। ভবিষ্যতে নারীর অগ্রযাত্রা যেন ত্বরান্বিত হয়, সবাই মিলে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে’।
তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে আয়শা খানম বলেন, শহর ও গ্রামের তরুণদের মধ্যেকার বৈষম্য দূর করতে হবে। গ্রামের তরুণদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
জানা যায়, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দেশের উন্নয়নের প্রতীক। বাজেটসহ সব ধরনের পরিকল্পনা হয় এর ভিত্তিতে। নারীর উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে ওই পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং একজন বিশেষজ্ঞের সুপারিশ নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, দেখুন, ৩৯০ বছরের পুরোনো গণতন্ত্র ব্রিটেনে। সেখানে মার্গারেট থ্যাচারই একবার মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আমেরিকায় আজও কোনো নারী রাষ্ট্রপতি হননি। আমাদের দেশে দেড় দশক ধরে মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এটা পর্বতশৃঙ্গের মতো অর্জন।
‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেশি দেয়া হয়। কারণ, এর সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন জড়িত। ২০১১ সালে নারীদের জন্য সরকার জাতীয় নীতি প্রণয়ন করেছে। নারীদের বিষয়ে খুব সচেতন রয়েছে সরকার। নারীদের সব বিষয় সামনে আনার চেষ্টা চলছে।’
মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শামিমা পারভিন মনে করেন, নারীর যত সফলতা তা নিজেকে অর্জন করতে হয়েছে। নারীর এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের সরকার, এনজিও, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য।
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা খানের মতে, গত ২০ বছরে নারীর মানবিক উন্নয়ন হয়েছে। এই মানবিক উন্নয়নকে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তর করা প্রয়োজন। দেশে আট কোটির বেশি নারী। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে হাজার হাজার বা লাখ লাখ নারী তাদের সক্ষমতা অর্জন করেছেন।
এক্ষেত্রে সহশিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, সহশিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বালিকা বিদ্যালয়ের মাধ্যমে জীবনের শুরুতেই বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে তুমি মেয়ে, তোমাকে আলাদা স্কুলে পড়তে হবে। কারও হাত ধরে স্কুলে যেতে হবে। প্রথমে বাবার বাড়িতে, পরে স্বামীর বাড়িতে, শেষে সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে হবে-একজন নারীর জীবনের নিয়তি এমন হতে পারে না।
মূলত নারীর উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এগিয়েছে। নারী শিক্ষিত হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অংশগ্রহণ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে নারীর জন্য পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।