চলতি বছর এপ্রিলের শেষে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পরীক্ষামূলক নভোযান, অ্যাডভান্সড কম্পোজিট সোলার সেল সিস্টেম (এসিএস ৩)। নভোযানটি বিশেষত্ব হলো তেল, গ্যাস বা তেজক্রিয় জ্বালানি নেই এতে। সরাসরি সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত হবে এ নভোযান।
অর্থাৎ পৃথিবীতে আমরা যেমন সূর্যের আলো বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে ব্যবহার করি, এখানে তেমন ঘটনা ঘটবে না। আলোর কণা ফোটনের ভরবেগ ব্যবহার করে মূলত এ নভোযানের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অনেকটা পালতোলা নৌকা বাতাসকে যেভাবে কাজে লাগায়, সেরকম। এজন্য এ প্রযুক্তি নাম, ‘সোলার সেইলিং’ বা সৌরপাল প্রযুক্তি।
উৎক্ষেপণের প্রায় চারমাস পর সম্প্রতি নভোযানটির বুম ও পাল খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নভোযানটি পৃথিবীর থেকে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে অবস্থান করছে। উৎক্ষেপণের পর ইচ্ছাকৃতভাবে এর অ্যাটিচিউট নিয়ন্ত্রণ করেনি বিজ্ঞানীরা। ফলে নভোযানটি মহাকাশের বেশ কিছুটা অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে। পাল ও বুম খোলার সময় কিছুটা বিপাকেই পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
নভোযানের মোটরে অতিরিক্ত উচ্চ তড়িৎ প্রবাহও শনাক্ত করেছিলেন। পরে বিজ্ঞানীরা সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে ২৯ আগস্ট সফলভাবে খুলে দেন বুম ও পাল। বর্তমানে নভোযানটি পরীক্ষামূলক পর্যায় পার করছে। বিজ্ঞানীরা এর নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতা বিশ্লেষণ করে দেখছেন।
সোলার সেইলিং প্রযুক্তিতে সূর্যের আলো ব্যবহার করে নভোযানে নিম্ন শক্তির গতি তৈরি করে। আলোর কণা ফোটনের ভর নেই। তবে ভরবেগ আছে। সূর্যের আলো পালে লাগলে এই ভরবেগ পালে স্থানান্তরিত হয়। ফলে মহাকাশযান গতি পায়। এতে মহাকাশযানে গতি খুব বাড়ানো যায় না। তবে জ্বালানী যেহেতু সূর্যের আলো, তাই দীর্ঘদিন ধরে কোনো বাড়তি খরচ ছাড়াই মহাকাশযান চালু রাখা সম্ভব এ প্রযুক্তিতে।
জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা সর্বপ্রথম এ প্রযুক্তির পরীক্ষা চালায় ২০১০ সালে। দেড়দশক পর এ প্রযুক্তি অনেকটাই পরিণত। সোলার সেইলিং প্রযুক্তি বাস্তবে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা যাচাই করার জন্য অ্যাডভান্সড কম্পোজিট সোলার সেল সিস্টেম (এসিএসএসএস) নামে এ নভোযান মহাকাশে পাঠিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীরা। এতে পালকে ধরে রাখার জন্য আগের চেয়ে হালকা ও টেকশই উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বুম। বুম মূলত লাঠির মতো লম্বা সরু একটি অংশ যা পালের সঙ্গে আটকে থাকে।
এ মুহূর্তে সুখবরটি হলো, নানারকম প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে মহাকাশযানটি কার্যকর আছে। এর যোগাযোগ, শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সোলার সেইলিং প্রযুক্তির কার্যকারিতা হাতে কলমে যাচাই করাই এ অভিযানের লক্ষ্যে। সব ঠিক থাকলে ভবিষতে দূর মহাকাশ অনুসন্ধানে এ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বদলে যেতে পারে মহাকাশ অনুসন্ধানের ব্যায়বহুল সমীকরণও।
নাসার এই অভিযানের চূড়ান্ত সফলতার খবর জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এখন চাইলে রাতের আকাশে আপনি নভোযানটি দেখতে পারেন। সৌরপালে আলোর উচ্চ প্রতিফলনের কারণে পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখা যায় এটি। কখন আকাশের কোথায় নভোযানটি দেখা যাবে তা জানা যাবে নাসার অফিশিয়াল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। খালি চোখে দেখার পর অনেকেই সেটা ক্যমেরায় হয়ত ধারণ করবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।