নাসা ও স্পেসএক্সের উদ্যোগে শীঘ্রই নয়া চন্দ্র অভিযান

ঘোস্ট রাইডার ইন দ্য স্কাই

শিগগিরই চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করবে ঘোস্ট রাইডার ইন দ্য স্কাই। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের যৌথ উদ্যোগে ১৫ জানুয়ারি চাঁদের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে এই নভোযান (ল্যান্ডার)। এই মিশনে নাসার নেতৃত্বাধীন ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক নতুন প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হবে।

ঘোস্ট রাইডার ইন দ্য স্কাই

ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে। এই ল্যান্ডারটি বানিয়েছে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস। ‘ঘোস্ট রাইডার্স ইন দ্য স্কাই’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই মিশন স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে চড়ে মহাকাশে যাবে। সঙ্গে থাকবে জাপানি সংস্থা আইস্পেস নির্মিত দ্বিতীয় আরেকটি মুন ল্যান্ডার। এর নাম রেজিলিয়েন্স। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাপানের এই সংস্থার একটি ল্যান্ডার চাঁদে অবতরণ করতে গিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল।

চাঁদে যাওয়ার আগে ব্লু ঘোস্ট পৃথিবীর চারপাশে ২৫ দিন ব্যয় করবে। এই সময় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরবে এটি। এর মাধ্যমে অর্জন করবে প্রয়োজনী গতিবেগ। তারপর ছুটবে চাঁদের উদ্দেশে। চাঁদের কক্ষপথে ১৬ দিন অতিবাহিত করে চন্দ্রপৃষ্ঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামার প্রস্তুতি নেবে। এই ফ্লাইবাই বা ঘোরার মাধ্যমে চাঁদ ও পৃথিবীর মহাকর্ষ কাজে লাগিয়ে কম জ্বালানি খরচ করেই প্রয়োজনীয় বেগ অর্জন করবে ল্যান্ডারটি। এর লক্ষ্য চাঁদের ‘মেরে ক্রিসিয়াম’ ক্রেটার বা খাদ। এই প্রাচীন গর্তটি গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্টি হয়েছিল। এটি প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত।

ঠিকভাবে অবতরণের প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ল্যান্ডারটি পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে শুরু করবে। চাঁদে রাত নামার আগে মাত্র ১৪ দিন সময় পাবে এটি। আগেই বলেছি, এই মিশনে নাসার নেতৃত্বাধীন ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হবে। এর একটা হলো লুনার এনভায়রনমেন্ট হেলিওস্ফেরিক এক্স-রে ইমেজার বা লেক্সি। এটি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করবে।

এই পর্যবেক্ষণের সাহায্যে চৌম্বকমণ্ডলে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলো পৃথিবীতে বসে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। আগে কখনো এমনটা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে নাসার কর্মকর্তা হিউনজু বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো চৌম্বকমণ্ডলের “শ্বাস-প্রশ্বাস” (অর্থাৎ সংকোচন-প্রসারণ) দেখতে পাব। কারণ, খুব শক্তিশালী সৌরবায়ু চৌম্বকক্ষেত্রে আঘাত করলে এটি সঙ্কুচিত হয়। সৌরবায়ু দূর্বল হয়ে গেলে আবার প্রসারিত হয় এটি।’

এই মিশনে থাকবে প্লাম-সারফেস স্টাডিজ (ক্যাল্পস) নামে দুটি স্টেরিও ক্যামেরা। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের দৃশ্য দেখা যাবে এই ক্যামেরার সাহায্যে। ব্লু ঘোস্টের ইঞ্জিন তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা।

অন্যান্য যন্ত্রগুলো চাঁদের ধূলিকণার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবে। চেষ্টা করবে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিকিরণ পরিমাপের। এমনকি চাঁদের অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা নিয়েও গবেষণা করবে। স্পেসএক্সের পাশাপাশি এসব যন্ত্রপাতি তৈরিতে ভূমিকা রেখে এ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে আমাজনখ্যাত জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং সাউথ-ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

মিশনের নাম: ঘোস্ট রাইডার্স ইন দ্য স্কাই

মূল নভোযান: ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডার

বাড়তি পেলোড: রেজিলিয়েন্স লুনার ল্যান্ডার, ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও কিছু পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি

লঞ্চ সাইট: লঞ্চ কমপ্লেক্স 39এ, কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ: ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

অবতরণের স্থান: মেরে ক্রিসিয়াম খাদ

চাঁদে অবতরণের সম্ভাব্য তারিখ: চলতি বছরের মার্চে

এই মিশন সফল হলে এটি হবে সিএলপিএসের (কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস প্রকল্প) দ্বিতীয় মিশন। প্রথমটা ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চাঁদের ম্যালাপার্ট খাদের কাছে অবতরণ করেছিল। সেই মিশনের নাম ছিল অডিসিয়াস। অডিসিয়াসেরও এক মাস আগে ‘পেরিগ্রিন’ নামে আরেকটি নভোযান চাঁদে অবতরণ করাতে চেয়েছিল নাসা। কিন্তু নভোযানের ট্যাঙ্ক ফুটো হয়ে জ্বালানি বেরিয়ে যাওয়ায় মিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে এনে সেটি ধ্বংস করা হয়। আশা করা যায়, ব্লু ঘোস্ট মিশন সফল হবে। কারণ, আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে অডিসিয়াসকে সফলভাবে অবতরণ করিয়েছিল নাসা।