অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান) খুঁজছেন—এমন মন্তব্য করে এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ঝড় তুলেছেন, তা এখনো থামেনি। বরং উপদেষ্টাদের প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
নাহিদের ওই মন্তব্য ঘিরে ইতোমধ্যে অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন, কেউ আবার মন্তব্য দিয়ে ‘আগুনে ঘি’ ঢেলেছেন।
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব উপদেষ্টা নিরাপদে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন—তাদের নামের তালিকা দলের হাতে রয়েছে। তারা কার সঙ্গে যোগসূত্র রাখছেন, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন—সবকিছুই “অচিরেই জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।”
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন।”
তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য, ফটোকার্ড ও পোস্টের ঝড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আলোড়ন।
বিতর্কের মুখে এনসিপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, “সেফ এক্সিট নিয়ে নাহিদ ইসলাম যা বলেছেন, তা কোনো গোপন তথ্য নয়—বরং এখন তা প্রকাশ্য বাস্তবতা।” তাদের দাবি, কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে; তারা রীতিমতো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে উঠেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদে কিছু দলীয় অনুগত ব্যক্তিকে আনা বড় ভুল ছিল। যদি অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা ছাত্রনেতৃত্বের অংশগ্রহণে সরকার গঠিত হতো, তবে আজকের পরিণতি দেখতে হতো না।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো বিশেষ দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দেননি।”
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে যা বলেছেন তা নিছক কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। তিনি (নাহিদ) নিজেও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। সরকারের ভেতর থেকে তিনি অনেকের ভূমিকা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। তবে কোন কোন উপদেষ্টা সেফ এক্সিট চান তাদের নামের তালিকা হয়তো তার কাছে আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তবে আমরা বাইরে থেকে যা দেখতে পাচ্ছি তা যথেষ্ট হতাশাজনক। অনেকের কোনো উদ্যোগী ভূমিকাও নেই। তাদের দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না যে, একটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতায় বসেছেন।
এনসিপি’র নেতারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া সেই মাফিয়া মিডিয়া এস্টাবলিসমেন্ট এখনো বহাল রয়েছে। তারা যে কোনো উপায়ে সরকারে থাকা দু’ছাত্র উপদেষ্টাকে টার্গেট করে সংবাদের শিরোনামে নিয়ে আসে। তারা সুযোগ পেলেই ছাত্র নেতৃত্বকে কোণঠাসা করতে মরিয়া। অথচ প্রকাশ্যে দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি চলছে। এ বিষয়ে তারা টুঁ শব্দ উচ্চারণ করে না।
এনসিপি নেতারা মনে করছেন, ২৪-এর জুলাই যোদ্ধারা পুরোনো রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের হাতে রীতিমতো প্রতারিত হচ্ছে। রাজপথে রক্ত দিয়ে তারা নতুন সূর্যোদয়ের সূচনা করেছিল। কিন্তু খোদ অন্তর্বর্তী সরকারই পথ ভুলে বিপরীত দিকে হাঁটছে। শুধু একটি দল বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দিতে সরকারের সব কর্মকাণ্ড চলছে। অথচ তরুণ নেতৃত্বের হাত ধরে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এদের মধ্যে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্যের স্বপক্ষে নাহিদ ইসলামকে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরার আহ্বান জানান।
এদিকে নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের সূত্র ধরে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং জুলাই আন্দোলনের আরেক শীর্ষ নেতা সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মাঝে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে, তারা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। দেশে থাকুন আর দেশের বাইরে থাকুন; এই দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।