জুমবাংলা ডেস্ক : বিদেশ থেকে এসে এক বন্ধুকে নিয়ে পোলট্রি খামার করেছিলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা শরীফ। বন্যায় তার চারটি পোলট্রি খামারে থাকা ৭ হাজার মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু সরিয়ে বাড়ির ছাদে রাখলেও সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়ায় মারা গেছে সব মুরগি।
শরীফ বলেন, কোনোদিন বন্যা হয়নি এই এলাকায়। এরকম কিছু একটা আমাদের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা ভাবতে পারিনি। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। আমরা পাইকারিভাবে পোলট্রির খাবার বিক্রি করতাম। যাদের কাছে বিক্রি করেছি তারাও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকার রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে পোলট্রি খামার করেছিলেন মোহাম্মদ আলম। তবে সেটি এখন পানির নিচে। খামারে দুই হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে। বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলোকে আলম ও তার ছেলে ধরাধরি করে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রেখেছেন। অর্ধেক দামে কিছু মুরগি বিক্রি করেছেন। তবুও ক্ষতি গুনতে হবে দুই লাখ টাকা বলে জানান আলম।
ঢামেক হাসপাতালকে ঢেলে সাজাতে ১০০ দিনের কর্মসূচিঢামেক হাসপাতালকে ঢেলে সাজাতে ১০০ দিনের কর্মসূচি
ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের আবদুল কুদ্দুস। সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে। ধার দেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৬০ লাখ দিয়ে শুরু করেন পোলট্রি ব্যবসা। দুই বছর ভালো চলছিল আয় রোজগার। হঠাৎ গত ২৩ আগস্ট তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ। বন্যায় কেড়ে নিল তার খামারের তিন হাজার লেয়ারসহ বয়লার ও সোনালীর ৫ হাজার মুরগি। সহায় সম্বল সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় আয় ও পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন ফেনীর আড়াই হাজারেরও বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তারা। ক্ষতি সামাল দিতে সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনার আশ্বাস চান তারা।
সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্ত ফেনীর ছয় উপজেলার ১০ লাখ মানুষ। পানির তোড়ে ভেসে গেছে তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, রাস্তাঘাটসহ সব কিছু। জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।
সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভেসে গেছে ৬৪ হাজার ১৬১ গবাদিপশু এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০ হাঁস-মুরগি। সব মিলিয়ে ফেনীতে প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকার। খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খাদ্যসহ সকল ধরনের সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।