আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ প্রতিনিধি দল। সেখানে গণঅভ্যুত্থান-বিরোধীরা একেরপর এক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ বিষয়টি তুলে ধরেন নিউয়ইর্কে অবস্থানতর সাংবাদিক ইমরান আনসারী।
তিনি লেখেন, ড. ইউনূসের জাতিসঙ্ঘ সফরে বিপ্লববিরোধী আওয়ামীপন্থীদের দাপট! ড. ইউনূসের জাতিসঙ্ঘ সফরে গণঅভ্যুত্থান-বিরোধীরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত; ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে যখন ড. ইউনূস ছাত্রদের প্রতিনিধি দু’জনকে ডাকছিলেন তখন ‘আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের ভাতিজা সেখানে শেখ হাসিনা স্টাইলে’ ঢুকে পড়েন। যা ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম স্বীকার করেছেন।
ইমরান আনসারী বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন এত বড় পোগ্রামে ওই ছেলে কিভাবে ঢুকল? এটি যুক্তরাষ্ট্র, আপনি ক্রাইটিরিয়া পূরণ করে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া মামুলি বিষয়। দ্বিতীয়ত; আজিজ আহম্মেদ যিনি ‘সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে দীর্ঘ ১৫ বছর ছবি তোলা মোছাবিদা’ করতেই সচেষ্ট থাকতেন। গতকাল তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশে পোগ্রামে বড় অঙ্কের ‘ডোনেশন দিয়ে ইউনূস সাহেবের সাথে একখান ছবি হাতিয়ে’ নিয়েছেন।
তিনি আরো লেখেন, ঠিক হায়াত হোটেলেও দেখলাম ‘ভারতীয়-বাংলাদেশী অ্যাজেন্টরা’ হরহামেসা ঘুরে বেড়াচ্ছে বিনা বাধায়। কাল রাতে অনেকে বললেন, আনসারী ওমুক ওমুক কিভাবে ঢুকল? আমি বললাম, ‘আপনি যেমনি ডুকছেন।’ আমাকে একজন বললেন, আপনি কিছু বলেন না কেন? আমি বললাম, ‘আমি এখানে বলার অথরিটি না। আমি বিপ্লবে অংশ নিয়েছি, নেতৃত্ব দিয়েছি প্রবাসে। তার মানেই আমি কারো প্রবেশ নিষেধ করতে পারি না।’ এছাড়া ‘সরকার বাহাদুরের’ সাথে যারা রয়েছেন তারা নিজেদের যেমনি ‘হনুরেভাবে’ চলা শুরু করছেন। ‘ফেইস করতে দেন’।
এদিকে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে মঞ্চে ওঠা ওই তরুণকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মাহফুজ আলম। তিনি লিখেছেন, সিজিআই ইভেন্টের লোকটি একজন অনুপ্রবেশকারী এবং একজন অসৎ ব্যক্তি ছিলেন। তার এ অনুপ্রবেশ নাশকতার অংশ। ওই ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে সিজিআই ইভেন্টে যোগ দেন। সেখানে প্রতিনিধি দলের সদস্যসহ আমরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না। তিনি প্রতিনিধি দলের কারো সাথে যোগাযোগও করেননি।
তিনি লিখেন, ‘স্যার আমাদের মঞ্চে ডাকলে হুড়মুড় করে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে তিনি (আলোচিত ব্যক্তি) দৌড়ে যান। তখন আমি তাকে মঞ্চে ওঠা থেকে ঠেকাতে পারিনি, যদিও আমি সন্দিহান ছিলাম। বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমি তখন অসহায় ছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত কাজ।’
ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতা, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো সতর্ক থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন।
সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে ওই তরুণকে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে দেখা গেছে। অনেকে তাকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মঞ্চে থাকা ওই তরুণ। তার নাম জাহিন রোহান রাজিন। তিনি হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে যখন ডাকলেন, তখন আমি দর্শকসারিতে ছিলাম। পাশে ছিলেন দুই বিদেশী ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন, তুমি বাংলাদেশী তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমি কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো আমি। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিতে আমি ড. ইউনূসের সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি আসবেন শুনে খুশি হয়েছিলাম এই কারণে যে তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে।’
সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে ছবি ছড়ানো প্রসঙ্গে জাহিন বলেন, ‘২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সাথে একটা কাজ করে হাইড্রোকো প্লাস। সে কাজের জন্যই মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে হয়েছিল। সেসময় তোলা ছবিটি। এটি কিভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলো, তা জানি না। আন্দোলনের সময় দেশেই ছিলাম। এ আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।’
বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, তৃতীয় তরুণ জাহিন রোহান রাজিন। তিনি হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেল কেশবপুরের রাস্তাঘাট, নৌকায় লাশ নেয়া হলো কবরস্থানে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।