নিউট্রনের চার্জ শূন্য হওয়ার পেছনে বিজ্ঞান কী বলে?

নিউট্রন

নিউট্রন পরমাণুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কণা। তবে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল বেশ পরে। পরমাণুর মৌলিক কণাদের আবিষ্কারের কালের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন ইলেকট্রন আবিষ্কৃত হয় ১৮৯৭ সালে। সেটিই ছিল প্রথম আবিষ্কৃত মৌলিক কণা। আর ১৯১৭ সালে আবিষ্কৃত হয় প্রোটন। ধনাত্মক চার্জের এই কণার অবস্থান পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে।

নিউট্রন

অন্যদিকে ঋণাত্মক চার্জের ইলেকট্রন থাকে নিউক্লিয়াসের বাইরে। নিউক্লিয়াসে যে আরও কণা থাকতে পারে এবং সেই কণার চার্জ যে শূন্য বা চার্জ নিরপেক্ষ হতে পারে, তেমন ইঙ্গিত প্রথম করেছিলেন পদার্থবিদ আর্নেস্ট রাদারফোর্ড। এরপর ১৯৩২ সালে সত্যিই তেমন একটি কণা আবিষ্কার করেন জেমস চ্যাডউইক। কণাটির নাম দেওয়া হয় নিউট্রন।

আবিষ্কারের পর প্রোটন এবং নিউট্রনকে মৌলিক কণা ভেবেছিলেন পদার্থবিদেরা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে এরা মৌলিক নয়, যৌগিক কণা। বা কম্পোজিট পার্টিকেল। কিন্তু সেটি তাত্ত্বিক ও পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করতে বিজ্ঞানীদের লেগে গেল দুই দশক। ১৯৬০-এর দশকের দিকে পদার্থবিদ মারে গেল-মান কোয়ার্ক মডেলের প্রস্তাব করেন। এ মডেল অনুসারে, প্রোটন এবং নিউট্রন আসলে কোয়ার্ক নামের আরও ক্ষুদ্র কিছু কণা দিয়ে গঠিত। সোজা কথায়, প্রোটন ও নিউট্রনকে ভাঙা সম্ভব এবং তাতে পাওয়া যাবে কোয়ার্ক কণা। কয়েক বছর পর এ তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণও পাওয়া গেল গবেষণাগারে।

যা-ই হোক, বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, নিউট্রন কণা গঠিত হয় তিনটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে। সেগুলো হলো: দুটি ডাউন কোয়ার্ক এবং একটি আপ কোয়ার্ক। অন্যদিকে প্রোটন গঠিত হয় দুটি আপ কোয়ার্ক এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে। ডাউন কোয়ার্কের চার্জ ঋণাত্মক—অর্থাৎ -১/৩। অন্যদিকে আপ কোয়ার্কের চার্জ ধনাত্মক—অর্থাৎ +২/৩। কাজেই নিউট্রন কণার মোট চার্জ হবে: (-১/৩) + (-১/৩)+ (+২/৩)= (-২/৩)+ (+২/৩)= ০। অর্থাৎ নিউট্রন কণার চার্জ শূন্য। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক কেন? প্রোটনের ভেতর থাকা কোয়ার্ক কণাদের চার্জ হিসেব করলে উত্তরটা নিজেই পেয়ে যাবেন।