জুমবাংলা ডেস্ক: চাকরি করতে ভিনদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ১৯ বছরের এক যুবক। আর তার পরই ওই যুবকের জীবনে ঘটে এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। বিদেশ যাওয়ার সময় যাত্রী হিসাবে বিমানে চরেছিলেন। আর ফিরলেন বাক্সবন্দি হয়ে। হ্যাঁ বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে নিজেকে বাক্সবন্দি করেন ঐ যুবক। সেই বাক্সে বন্দি হয়েই বিমানে করে ঘরে ফিরেছিলেন তিনি। এই কাহিনী জানলে হতবাক হবেন।
১৯৬৫ সালের কথা। সেই বছরই অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজের দেশ ওয়েলসে ফিরতে বাক্সের মধ্যে নিজেকে বন্দি করেছিলেন ব্রায়ান রবসন। সবার চোখ এড়িয়ে বাক্সে বন্দি হয়ে বিমানে করে নিজের দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
ব্রায়ান রবসন তখন ১৯ বছরের যুবক। ওয়েলসে বাস কন্ডাক্টরের কাজ করতেন তিনি। ভিক্টোরিয়ান রেলওয়ে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন রবসন।
চাকরিটা পেয়েও গিয়েছিলেন। নতুন চাকরি। মনে একরাশ স্বপ্নে বুঁদ হয়ে ওয়েলস থেকে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। মেলবোর্নে শুরু হয় তার নতুন জীবন।
অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর রবসনের নতুন চাকরির উত্তেজনা কর্পূরের মতো উবে গেল। দেখলেন, থাকার জন্য রবসনকে যে হস্টেল দেওয়া হয়েছে, তার অবস্থা শোচনীয়। চারদিকে ইঁদুরের রাজত্ব। এই হাল দেখে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সিদ্ধান্ত বদলান রবসন। ঠিক করেন চাকরিটা করবেন না। নিজের দেশে ফিরে যাবেন।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরতে পারেননি। কারণ, দেশে ফেরার জন্য তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। সব সময় ভাবতেন কী ভাবে দেশে ফিরবেন?
শেষমেশ চাকরি ছাড়েন। ছেড়ে দেন তার জন্য বরাদ্দ থাকা হস্টেলটিও। এরপর মেলবোর্নে যান তিনি। সেখানে একটি কাগজের কারখানায় যোগ দেন। কাগজের কারখানায় কাজের পরেও দেশে ফেরার জন্য মুখিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু, দেশে ফেরার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তার আর্থিক সামর্থ্য।
এইভাবে দিন কাটাতে গিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার আগের হস্টেলের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে কিনা দেখার জন্য সেখানে আবার যান তিনি। সেই সময়ই তার সঙ্গে আলাপ হয় জন এবং পল নামে দুই যুবকের। জন এবং পলের সঙ্গে অল্প দিনের মধ্যেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল রবসনের। দেশে ফেরার বাসনার কথা দুই বন্ধুকে জানান তিনি।
দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন রবসন। সেখানে ব্রিটেনের একটি কুরিয়ার সার্ভিস সংস্থার স্টল ছিল। যা দেখে রবসন মজা করে তার বন্ধুদের বলেছিলেন যে, তাকেও কুরিয়ার করে দেশে পাঠানো হোক। গোটাটাই ছিল মজার ছলে। এরপরই নিজেকে ক্যুরিয়রে পাঠানোর পরিকল্পনা খেলে যায় রবসনের মাথায়।
পরের দিনই মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানসংস্থার দফতরে গিয়ে রবসন খোঁজ নেন যে, বিদেশে বাক্স পাঠাতে গেলে কী করতে হবে। বাক্সটি কত বড় হবে, কী কী নিয়ম রয়েছে, এই সব নিয়ে খোঁজ নেন। সব তথ্য সংগ্রহের পর হস্টেলে ফিরে জন এবং পলকে রবসন জানান যে, তার দেশে ফেরার একটা রাস্তা রয়েছে। কী সেই রাস্তা?
৩০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ২৬ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ৩৮ ইঞ্চি চওড়া একটি বাক্স কিনলেন রবসন। বাক্সের মধ্যে রবসনকে বন্দি করলেন তার দুই বন্ধু। তারপরই বাক্সটি বিমানে করে পাঠানো হলো লন্ডনের উদ্দেশে। এমনটাই পরিকল্পনা করেছিলেন ওয়েলসের ঐ যুবক। এবং সেই পরিকল্পনা সফলও হলো।
রবসনকে বাক্সে ভরে বিমানে তোলার আগে প্রায় এক মাস ধরে মহড়া চলেছিল। বাক্সের মধ্যে রবসনকে দীর্ঘক্ষণ ভরে রাখা হতো। মধ্যে থেকে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য এই মহড়া চালিয়েছিলেন তার দুই বন্ধু।
বাক্স পাঠানোর জন্য লন্ডনের বিমানের টিকিট কেটেছিলেন রবসন। সেই মতো সেই বাক্স বিমানে তোলা হয়েছিল। রবসনের সঙ্গে বাক্সে ছিল একটি হাতুড়ি, সুটকেস, বালিশ, জল, টর্চ, খালি বোতল। এইভাবেই বাক্সে বন্দি হয়ে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রবসন।
তবে এই যাত্রা মোটেই সুখের ছিল না তার জন্য। বাক্সবন্দি হয়ে রবসনের বিমানযাত্রার প্রথম ধাপে বিমান উড়েছিল মেলবোর্ন থেকে সিডনির উদ্দেশে। প্রায় ৯০ মিনিট বাক্সবন্দি হয়ে সিডনিতে যান রবসন। এরপর সেই বাক্সটি তোলার কথা ছিল লন্ডনগামী বিমানে। কিন্তু সেই বিমানে জায়গা না থাকায় বাক্সটি লস অ্যাঞ্জেলসের উড়ানে তোলা হয়। লন্ডনের বদলে বাক্সসমেত রবসন তখন উড়ে যান লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে।
টানা প্রায় পাঁচদিন বাক্সে বন্দি ছিলেন রবসন। শুধু তাই নয়, বাক্সটিকে কখনো ছুড়ে ফেলেছেন বিমানকর্মীরা। আবার কখনো বাক্সটিকে টানাহেঁচড়া করে বিমানে তোলা হয়েছে। আর এর জেরে বাক্সের মধ্যে রবসনের করুণ দশা হয়েছিল।
এক সংবাদমাধ্যমে রবসন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেছিলেন যে, নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছিলেন না ঠিক করে। অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। ভেবেছিলেন, হয়তো মৃত্যু অনিবার্য।
লস অ্যাঞ্জেলসে বিমান নামতেই বাক্সটি নজরে আসে বিমানবন্দরের দুই কর্মীর। সেই সময় বাক্সের তলা থেকে একটি টর্চ পড়ে গিয়েছিল। আর তা দেখেই বাক্সটি লক্ষ্য করেন ঐ কর্মীরা।
বাক্সটি পরীক্ষার সময় যন্ত্রে আওয়াজ হয়। কর্মীরা বুঝতে পারেন যে, সন্দেহজনক কিছু রয়েছে। এরপর বাক্সটি খুলতেই চমকে যান তারা। দেখতে পান রবসনকে। বিমানবন্দরের কর্মীরা ভেবেছিলেন হয়তো রবসনের মৃত্যু হয়েছে। দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে চিৎকারও জুড়ে দেন তারা।
পরে সেই ভ্রম কাটে। বিমানবন্দরের কর্মীরা দেখেন যে, রবসন জীবিত। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছয়দিন ধরে তার চিকিৎসা করানো হয়।
এরপর লস অ্যাঞ্জেলস থেকে রবসনকে ফেরানো হয় লন্ডনে। ১৯৬৫ সালের ১৮ মে লন্ডন বিমানবন্দরে নামেন রবসন। আর এভাবেই ঘরে ফিরেছিলেন রবসন। তার কথায়, ‘আমায় পেয়ে পরিবার স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে ফিরেছি, তাতে তারা সবাই স্তম্ভিত।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।