আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া: বাংলাদেশ সরকারের হাত থেকে বাঁচতে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস (পিআর) করতে চেয়ে আবেদন করেছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন এম খায়রুজ্জামান।
দেশটির সরকারের কাছে পিআর (স্থায়ীভাবে বসবাস) আবেদনে খায়রুজ্জামান উল্লেখ্য করেছেন, তাকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করা হলে তার জীবন বিপন্ন ও হুমকিতে পড়বে। এজন্য ইসলামিক স্কলার ডা. জাকির নায়েককে যেভাবে ভারত সরকারের হাত থেকে বাঁচাতে মালয়েশিয়ায় (পিআর) নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই তাকে যেন দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ( ৩ মার্চ) ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
পিআর আবেদনে খায়রুজ্জামান আরও বলেন, ডা. জাকির নায়েককে ভারতে প্রত্যাবর্তন করা হলে সরকারের রেষানলে ডাঃ জাকিরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হত। বাংলাদেশ সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হলে তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা দিয়ে তাকে ও হয়রানি করা হবে। এজন্য তিনি আশা করছেন মালয়েশিয়ার সরকার তার আবেদন গ্রহন করবেন। যদি তাকে পিআর দেওয়া হয় তাহলে তিনি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন এবং দেশটির সরকারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানাবেন।
তবে এই পিআর প্রদানের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের কি অবস্থান বা তাদের প্রতিক্রিয়া কি এখনো জানা যায়নি।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে খায়রুজ্জামানের বরাত দিয়ে আরও জানায়, এম খায়রুজ্জামান যখন মালয়েশিয়ায় (২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত) বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তখন কলিং ভিসায় কোন সিন্ডিকেট ছিল না। তখন উম্মুক্ত পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সি স্বাধীনভাবে শ্রমিক প্রেরণ করেছেন। সে সময় কোনও দুর্নীতি ছিল না। কিন্তু এর পরই ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে এসপিপিএ নামে সিন্ডিকেট হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে আটক করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। কিন্তু এরপরই খায়রুজ্জামানের স্ত্রী আইনজীবীর মাধ্যমে কুয়ালালামপুর আদালতে একটি রিট করেন। তাতে বলা হয়েছে খায়রুজ্জামানের পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার আগেই বাতিল করেছে। এখন মালয়েশিয়ায় শরনার্থী হিসেবে তার ইউএনসিএইচআর এর বৈধ কার্ড রয়েছে। তাই অভিবাসন পুলিশ তাকে আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারেন না। তাকে যেন বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
এদিকে, জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNCHR) এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগকে সতর্ক করে বলেন, যেহেতু এম খায়রুজ্জামানের বৈধ শরনার্থী কার্ড রয়েছে সেহেতু তাকে আটক, হয়রানি, দেশে প্রত্যাবর্তন হবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তাই খায়রুজ্জামানকে মুক্তি দেওয়া হউক। এরপর তাকে আটকের এক সপ্তাহ পর কুয়ালালামপুর আদালতে এই রিটের শুনানি শেষে এম খায়রুজ্জামানকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান সেই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন, তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে বিদেশে পাঠায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাইকমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।