সমুদ্রের তলদেশে জীবনধারণ কঠিন। অন্ধকার, ঠান্ডা, পানির প্রচণ্ড চাপ—সবমিলে নারকীয় পরিবেশ। খাবারের প্রাচুর্য্য না থাকায় ওখানকার প্রাণীদের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কয়েক শ মিটার নিচে সূর্যের আলোর যে অতি ম্লান আভা পৌঁছায়, তা দিয়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াতেও খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না উদ্ভিদ। ফলে সমুদ্রতলের প্রাণীদের খাবারের প্রধান উৎস হলো ওপর থেকে নেমে আসা সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃতদেহ বা সমুদ্রের তলদেশে থাকা অন্যান্য প্রাণী।
এ নারকীয় পরিবেশের প্রাণীদের তাই খাবার নিয়ে বিলাসিতা করা পোষায় না। যা পায়, তা-ই খায়—এমন অবস্থা। এই নিয়মটা ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার খুব গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলে। যা পায়, সব খায়। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম কায়াসমোডন নাইজার (Chiasmodon niger)।
গভীর সমুদ্রের অন্যান্য মাছ, যেমন ভয়াল দর্শন দাঁতাল অ্যাঙ্গলার বা বড়মুখো বা বিশাল চোয়ালের পেলিকান বাইম মাছের তুলনায় সোয়ালোয়ার দেখতে একদম সাদাসিধে। আকারে ৬-৮ ইঞ্চি। খালি পেটে এদের সাধারণ মাছের মতোই দেখায়। সামুদ্রিক সার্ডিন মাছের মতো সরুদেহ নিয়ে পানি কেটে চলে তরতরিয়ে। কিন্তু আপনি যদি ওদের খাওয়াদাওয়ার পরের অবস্থা দেখেন, তাহলে বুঝবেন, কেন এদের পেটুক মাছ বা সাগরদানো বলা হয়।
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার প্রশস্তভাবে চোয়াল খুলতে পারে। মানে, হাঁ করতে পারে বিশাল করে। এদের পেট রবারের মতো। প্রয়োজনে পেট এত বড় হয়ে যায় যে ত্বক স্বচ্ছভাবে দেখা যায়।
পেলভিক ফিন বা পেটের সঙ্গে যুক্ত পাখনাগুলো অন্যান্য মাছের মতো পেটের নিচে যুক্ত থাকে না। ফলে পেট অস্বাভাবিক চওড়া হতে পারে। এরা মোটামোটি যেকোনো কিছু গিলে ফেলতে পারে চিবানো ছাড়াই। নিজের দ্বিগুণ মাছ আকারের অনায়েসে গিলে ফেলতে জুড়ি মেলা ভার ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারের। এমনকি নিজের ওজনের অন্তত দশ গুণ খাবার পেটে ঢুকিয়ে ফেলতে পারে একবেলায়! মানুষের এ ক্ষমতা থাকলে এক বসায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ৭০০-৮০০ কেজি খাবার খেয়ে ফেলতে পারত!
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারকে স্নেকটুথ বা সর্পদন্তও বলা হয়। শিকার পেটে চালান করার জন্য শিকারকে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে সাপের মতো একটু একটু করে গিলে ফেলে।
সমুদ্রের ৭০০ থেকে ৩ হাজার মিটার নিচে এমন খাদ্যাভাস নিঃসন্দেহে এদের টিকে থাকার জন্য জরুরি। তবে বিপুল পরিমাণ খাবার খাওয়ায় তা হজম করতে অনেক সময় লেগে যায়। মাঝেমধ্যে খাবার হজম করতে না পেরে বিপদে পড়ে এরা।
সাপের জন্য বড় শিকার হজম করা তুলনামূলক সহজ। খাবার খেয়ে গর্তে একটু ঘুমিয়ে নিলেই হলো। শরীরের পরিপাকতন্ত্রই যা করার করবে। কিন্তু মাছের হজম প্রক্রিয়া স্থলচর প্রাণীর মতো দ্রুত নয়। ফলে হজমের এনজাইম খাবার মজিয়ে ফেলার আগেই হয়তো পেটের মধ্যে পচতে শুরু করবে খাবার।
যদি তা-ই হয়, তাহলে পচা খাবারের গ্যাসে ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারের পেট বেলুনের মতো ফুলতে থাকে। ফলে নিজের অঞ্চল ছেড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানির ওপরের দিকে উঠতে থাকে এরা। এটা ওদের জন্য খুব বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী। কারণ, ওপরের দিকে শিকারি মাছের সংখ্যা বেশি। পেট ভারি থাকার কারণে গতিও কমে যায়। তা ছাড়া ওপরের দিকে পানির চাপ কম থাকায় শরীর আরও স্ফিত হতে থাকে। একপর্যায়ে মারা যায়, ভেসে ওঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে।
এভাবেই ১৮৬০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠে ভাসমান অবস্থায় এ মাছ আবিষ্কার করেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের কেইম্যান দ্বীপের এক জেলের জালে ধরা পড়ে প্রায় সাড়ে ৭ ইঞ্চি ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার। ওটার পেট ছিল ফোলা। পেটের মধ্যে ৩৪ ইঞ্চি লম্বা স্নেক ম্যাকরেল ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।