জুমবাংলা ডেস্ক : নিজের পড়ার টেবিলে বসে রবিবার সন্ধ্যায় অঙ্ক কষছিলেন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। এর মাঝেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর নিজের রুমে আর ফিরতে পারেননি তিনি। শেষ করতে পারেননি সেই অঙ্ক। তার আগেই মিলে যায় জীবনের অঙ্ক। তার মৃত্যুশোকে মুহ্যমান গোটা দেশ। হ’ত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষাঙ্গনগুলোয় চলছে বিক্ষোভ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে গিয়েও দেখা যায়, আবরারের পড়ার টেবিলে খোলা পড়ে আছে তার ‘ইলেক্ট্রিক মেশিনারি ফান্ডামেন্টালস’ বইটি। পাশেই ক্যাপ খোলা কলম। একটি খাতায় অসমাপ্ত অঙ্ক। সহপাঠীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে রুম থেকে ডেকে নেওয়ার আগে তিনি পড়ার টেবিলেই ছিলেন। তার বই-খাতা দেখিয়ে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানালেন, আবরার কখনো কারও সঙ্গে উচ্চবাচ্যে কথাও বলত না। সব সময় লেখাপড়ায় মগ্ন থাকত।
নকি বিকালে অন্যরা খেলাধুলায় গেলেও সে রুমে বসে ক্লাসের অ্যাসাইমেন্ট সম্পন্ন করত। সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসে চিপস খেতে পছন্দ করত আববার। সেদিনও এক প্যাকেট চিপস নিয়েই বসেছিল পড়ার টেবিলে। খোলা চিপসের প্যাকেটটিও পড়ে রয়েছে।
বিছনায় সবুজ রঙের বেডশিটের ওপর এলোমেলোভাবে পড়ে আছে মায়ের দেওয়া কাঁথাটি। একপাশে পড়ে আছে মোবাইল চার্জার। খাটের নিচে ধূসর রঙের ট্রাংক, তার ওপর সাদা রঙে ইংরেজিতে লেখা ‘ফাহাদ’। রুমের একপাশে পড়ে আছে তার ব্যবহৃত নীল রঙের বালতি-মগটিও। পড়ার টেবিলে পড়ে আছে সাধারণ জ্ঞানচর্চার কিছু বই, রবীন্দ্র রচনাসমগ্র, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্রসহ সাহিত্যের আরও কিছু বই, টিস্যু পেপার, কলমদানি। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র আবরার ফাহাদ সাহিত্য পড়তেও পছন্দ করতেন।
একজন সহপাঠী জানান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের একটি বিষয় হচ্ছে ‘ইলেক্ট্রিক মেশিনারি ফান্ডামেন্টালস’। বইটির ৫৯ পৃষ্ঠার কনটিনিউয়াস টাইম সিস্টেম সাফটার-২ অধ্যায় অনুশীলন করছিলেন আবরার। এ সময়ই তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গণিতের খাতাটা খোলা রেখেই তিনি চলে যান। আবরারের রুমের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি টিউশনি থেকে ফিরি। আসার পর আবরার সালাম দেয়। আমি পোশাক পাল্টে ওয়াশরুমে যাই। পরে দেখি কয়েকজন এসে তাকে নিয়ে গেল। তার সঙ্গে আমার সেটাই শেষ দেখা।’ কথা শেষ করতে পারলেন না মিজানুর, কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।