ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রচার-প্রচারণায় সরব চট্টগ্রাম। নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিকেল ৩টার পর থেকে মাইকিং করে ভোটারদের কাছ থেকে স্ব-স্ব প্রতীকে ভোট কামনা করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ সময় নানারকম স্লোগান ও নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কেও জানিয়ে রাখছেন প্রার্থীদের প্রচারকর্মীরা।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে শক্তিশালী কোনো দলের কিংবা শক্ত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থনে জোরেসোরে প্রচার চলছে। তিনি নিজেও নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন।
এ সময় ভোটারদের উদ্দেশ্যে নওফেল বলেন, চট্টগ্রাম-৯ আসনের কর্ণফুলী তীর সংলগ্ন অনেক এলাকা জোয়ার-ভাটার কারণে প্লাবিত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ে। আমি সমস্যাগুলো অনুধাবন করি এবং তা সমাধানে আমার কিছু ভাবনা-চিন্তা আছে। বিলুপ্ত প্রায় চাক্তাই খাল পুনরুদ্ধারে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, সেগুলো আমি নিজেই তদারকি করবো।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুও বেশ সরবেই রয়েছেন মাঠে। তার অনুসারী তরুণ ভোটাররাও নেতার প্রচারণায় রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার আসনে মনজুরুল আলম মনজু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়ায় তাকেও জোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের সুখ-দুঃখের সাথেই ছিলাম একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে। নেত্রী যখন আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, তখন আমি গুরুত্ব দেবো মানুষের জানমাল রক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সামাজিক সুরক্ষাবলয় রচনা করেছেন, তা প্রদানে এলাকা ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি আমি দেখাশুনা করবো।
বাচ্চুর প্রতিদ্বন্দ্বী মনজু ফুলকপি প্রতীক নিয়ে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ এগিয়ে রয়েছেন। এলাকায় জনসংযোগকালে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষে সরল মনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমাকে ভোট দেওয়া নয়, আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিবেন। তিনি এই জাতিকে এগিয়ে নেবেন। আজ চারদিকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশকে পিছিয়ে নেওয়ার। আপনাদের রায়ে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবো।’
একই আসনে নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মাহমুদও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা ভোট দেওয়ার আগে একবার চিন্তা করুন, কাকে ভোট দিবেন বা দিচ্ছেন। তিনি কি আপনার স্বার্থ রক্ষা করবেন, না কি দখলবাণিজ্য করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করবেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রচার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া গত তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ নির্বাচনি প্রচার শুরুর প্রথম দিন থেকে তার অনুসারীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। প্রচারণায় চমক আনার জন্য তিনি নারী ভোটার ও অনুসারীদের কাজে লাগাচ্ছেন বেশি।
তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন নিয়েই মাঠে নেমেছি। বিগত ১৫ বছর মানুষের পাশেই ছিলাম, মানুষের পাশেই আছি। মানুষের সেবা করা আমাদের পারিবারিক রীতি। সুতরাং এলাকার মানুষের ভালোবাসা আমার সাথে রয়েছে। ‘
চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন কেটলি প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই ঢোলবাদ্য বাজিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগে নেমে যান। নগরীর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা থেকে জনসংযোগ শুরু করেন তিনি। তার পক্ষে এলাকার তরুণ ও সচেতন নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন বেশি।
কেটলি প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আমার একটাই কথা, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে আবারও ক্ষমতায় আসতে হবে। আমি তৃণমূলের কর্মী। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে সবসময় ছিলাম, সবসময় আছি। ইনশল্লাহ আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব।’
চট্টগ্রাম-৮ (নগরীর চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসন জাতীয়পার্টীর প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সেখানকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি নোমান আল মাহমুদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন। ফলে এই আসনেও জেতার জন্য উভয় পক্ষ জোর প্রচারণা ও ভোটরদের আকৃষ্ঠ করার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছেন।
দুজনই পাড়া মহল্লায় গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম এলাকার সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সরাসরি প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি সবার সমর্থন লাভে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে জোটের শরীক দল হিসেবে জাতীয়পার্টীর প্রার্থী হয়ে সোলায়মান আলম শেঠও জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনিতেই তিনি অত্যন্ত প্রচারমুখী মানুষ বলে নাম রয়েছে। তার উপর প্রথমবারের মতো জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ায় বেশ ফুরফুরে মেজাজেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয় লাভে আশাবাদী।
হেভিওয়েট প্রার্থীদের পাশাপাশি নগরী ও জেলায় অন্যান্য আসনগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ছোটো ছোটো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও বেশ প্রচারণায় রয়েছেন। ফলে চট্টগ্রামে এখন চলছে ভরা নির্বাচনী আমেজ। সাধারণ মানুষেরও এখন আলাপ-আলোচনার মূল বিষয় আসন্ন সংসদ নির্বাচন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।