বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : জিপিএস প্রযুক্তির চেয়েও নিখুঁত ও বেশি কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন নেদারল্যান্ডসের একদল গবেষক। কোনো স্যাটেলাইটের সহযোগিতা ছাড়াই এ প্রযুক্তিতে চিহ্নিত লোকেশনের সঙ্গে ব্যবহারকারী বা লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের হেরফের হয় চার ইঞ্চির কম।
দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রা পথ খুঁজে নিতে বা অজানা গন্তব্যের অবস্থান খুঁজে বের করতে ‘জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)’ প্রযুক্তির ব্যবহার এখন বহুল প্রচলিত।
কিন্তু, একশ ভাগ নির্ভরযোগ্য নয় এ প্রযুক্তি; বিশেষ করে শহুরে অবকাঠামোর মধ্যে লক্ষ্যবস্তু বা ব্যবহারকারী সরাসরি স্যাটেলাইটের দৃষ্টিসীমায় না থাকলে এ প্রযুক্তির পুরো সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না।
সমাধান হিসেবে ‘সুপারজিপিএস’-এর কথা বলছেন নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সায়েন্সঅ্যালার্ট বলছে, ক্ষেত্রবিশেষে বহুল প্রচলিত জিপিএস প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এটি।
ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে, কার্যপ্রণালীর বিচারে মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এ প্রযুক্তি; তবে ফোনে ডেটা স্ট্রিম করার বদলে এটি ডিভাইসের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করে।
এ ক্ষেত্রে রেডিও ট্রান্সমিটার এবং ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের সমন্বিত ভূমিকা এ প্রযুক্তির মূল অবকাঠামো হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছে সায়েন্সঅ্যালার্ট।
নতুন প্রযুক্তির ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ফ্রেই ইউনিভার্সিটেট অ্যামস্টারডাম’-এর পদার্থবিজ্ঞানী ইয়েরোন কুলমাই বলেন, “আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে কয়েকটি সর্বাধুনিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ককে নির্ভুল ও ও বিকল্প পজিশনিং সিস্টেমে পরিণত করা সম্ভব যা জিপিএস-এর ওপর নির্ভরশীল নয়।”
“আমরা সফল হয়েছি এবং এমন একটি সিস্টেম দাঁড় করিয়েছি যা প্রচলিত মোবাইল এবং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মতোই সংযোগ সুবিধা দিতে পারবে এবং জিপিএসের মতো সঠিক লোকেশন ডেটা দিতে পারবে।”
৬৬০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে পরিচালিত এক পরীক্ষায় ছয়টি রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তির কার্যক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন গবেষকরা। রেডিও সিগনাল ট্রান্সমিশনের সময় পরিমাপ করে তার ভিত্তিতে দূরত্ব নির্ধারণ করা সম্ভব এ প্রযুক্তিতে; যা কার্যত ব্যবহারকারী বা লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান জানান দেয়।
এ প্রযুক্তির কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে সমন্বিত অ্যাটোমিক ক্লক। পরমাণুর কম্পনাঙ্ক পরিমাপ করে সময়ের হিসেব রাখে অ্যাটোমিক ক্লক। আর ‘সুপারজিপিএস’ প্রযুক্তিতে সঠিক লোকেশন ডেটার জন্য সময়ের সঠিক হিসেব রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পুরো সুপারজিপিএসের বিচ্ছিন্ন অংশগুলোর মধ্যে সবকিছু সমন্বয়ের কাজ করে ফাইবার অপটিক কেবল। এক্ষেত্রে সময়ের হেরফের হয় এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ।
এ ছাড়াও, সুপারজিপিএস স্বাভাবিকের চেয়ে বিস্তৃত রেডিও ব্যান্ডওয়াইডথ ব্যবহার করে। একাধিক ছোট ছোট রেডিও সিগনাল ব্যান্ডওয়াইডথ সমন্বয় করে বিস্তৃত একটি ব্যান্ডওয়াইডথ বানিয়ে নিয়েছিলেন গবেষকদল।
বাড়তি ব্যান্ডওয়াইডথের কারণে প্রচলিত জিপিএস প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন গবেষকরা। শহুরে পরিবেশে দালানের দেয়ালে প্রতিফলিত হয় রেডিও সিগনাল; যার ফলে ভুল তথ্য আসার ভয় থাকে জিপিএস থেকে।
এতে ‘শহুরে পরিবেশে জিপিএস অনির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে’ বলে মন্তব্য করেছেন নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির বিদ্যুৎ প্রকৌশলী ক্রিস্টিয়ান টিবেরাস।
কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল ডিভাইসের জন্য নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি নির্মাণে এ ‘সুপারজিপিএস’ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করছেন এর গবেষকরা। সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ নিজেদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তারা।
‘সুপারজিপিএস’-কে প্রচলিত জিপিএস প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন। ট্রান্সমিশন প্রোটোকল আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ব্যবহার চালু থাকলেও প্রস্তাবিত নেটওয়ার্কভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য সময়ও প্রয়োজন।
তবে গবেষকরা বলছেন, বিদ্যমান মোবাইল ডিভাইস এবং ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই সুপারজিপিএসের কার্যক্ষমতা যাচাই করা যেতে পারে।
নতুন প্রযুক্তি সম্ভাবনা নিয়ে গবেষকদল নেচারে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে লিখেছেন, “আমাদের কাজ এমন এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে যেখানে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক কেবল সংযোগ সুবিধা দেয় না বরং অভূতপূর্ব নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে জিএনসিসি থেকে স্বাধীন সময় এবং লোকেশন সেবা দেয়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।