সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে চলছে মা ইলিশ ধরার মহোৎসব। ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও মজুদের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত চারদিন ধরে প্রকাশ্যেই চলছে মাছ ধরা ও বিক্রি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রায়পুরের মেঘনা নদীর চরবংশী হাজিমারা সুইসগেইট, আলতাফ মাষ্টার মাছঘাট, পুরানভেরি, চান্দারখাল ও সাজু মোল্লার ঘাটে অসংখ্য জেলে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে ইলিশ ধরছেন। এসব মাছ স্থানীয় ঘাট ও বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, রায়পুর উপজেলায় গত চার মাস ধরে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নেই। সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার পদও শূন্য রয়েছে প্রায় দুই বছর। পাশাপাশি এখনো কোস্টগার্ডের টহল না থাকায় কোনো ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। এতে জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
চান্দারখাল এলাকার জেলে মহিউদ্দিন ও হাসিম খান বলেন, ৪ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মৎস্য কর্মকর্তা বা কোস্টগার্ড কেউ নদীতে আসেননি। অনেক জেলে ঋণের চাপে পড়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে নদীতে যাচ্ছেন।
হায়দরগঞ্জ এলাকার জেলে আবুল মাঝি বলেন, আমরা বড় মাছের আশায় জাল ফেলি। জালে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা পড়ছে। কিন্তু অনেক জেলে কারেন্ট জাল দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে জাটকা ধরছেন। মৎস্য বিভাগ তদারকি না করায় এমনটা হচ্ছে।
মেঘনার পাড়ের কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, জেলেরা নদী থেকে যে মাছ ধরছে, তা বিক্রি না করলে আমাদেরও লোকসান হবে। কারণ জেলেদের কাছে আমরা দাদন (অগ্রিম টাকা) দিয়ে রেখেছি।
স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, রায়পুর উপজেলায় কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের স্থায়ী ফাঁড়ি নেই। নিকটতম ফাঁড়ি রয়েছে চাঁদপুরের চরভৈরবী এলাকায়। তারা মাঝে মধ্যে সীমিত পরিসরে অভিযান চালালেও রায়পুরে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সচেতন নাগরিক ও জেলে নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশের মারাত্মক সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও দেখা দেবে খাদ্য ও কর্মসংস্থানের অভাব।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ শিকার, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে রায়পুরসহ মেঘনা পাড়ের কিছু এলাকায় অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীরা এ আইন অমান্য করছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, রায়পুরে একজন মৎস্য কর্মকর্তা পদায়ন করা হলেও তিনি এখনো যোগ দেননি। এছাড়া কোস্টগার্ড না থাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ে সীমিত জনবল ও নৌযান নিয়ে অভিযান চলছে।
তিনি আরও জানান, রায়পুর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার জেলে নিবন্ধিত রয়েছেন। নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদেরও শিগগিরই আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।