বিনোদন ডেস্ক: পাতা ঝরার দিন শেষ হয়েছে। গাছে গাছে পত্রপল্লব নতুন রং ধারণ শুরু করেছে। আর একদিন বাদেই যে পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। বসন্তের আগমনের আগমুহূর্তে আগাম খুশির আমেজ থাকার কথা থাকলেও শোবিজের মানুষ আর ভক্তদের মধ্যে বিষাদের ছায়া ভর করে থাকে এদিন। কেননা শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার দিন এটি। ২০১২ সালের এই দিনে নীরবে নিভৃতে হঠাৎ সবাইকে ফাঁকি চলে যান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক ক্যামিষ্ট্রির ছাত্র হুমায়ূন ফরিদী যখন টগবগে যুবক তখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। দেশমাতৃকার টানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রাইফেল কাঁধে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
দেশ স্বাধীন হলে আবার শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। এবার ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। তবে অভিনয়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তাকে বাংলা নাটকের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীনের কাছে টেনে আনে। তিনি তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে। অভিনয়ের আদর্শ প্রতিষ্ঠান কিংবা স্কুল হিসেবে তার যে পরিচিতি সেটা সেখান থেকেই বিকাশ ঘটে।
১৯৫২ সালের ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম ও মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। হুমায়ুন ফরীদির আসল নাম কামরুল ইসলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি সুযোগ পান ঢাকা থিয়েটারে কাজ করার। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তার ব্যাপ্তি ছড়াতে থাকে আভূমিময়।
মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করা হুমায়ুন ফরীদি ‘নিখোঁজ সংবাদ’ এর মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিনয়যাত্রা শুরু করেন। তবে তার দেশব্যাপি জনপ্রিয়তা আসে ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ এর মাধ্যমে। এই নাটকে কানকাটা রমজান চরিত্রে তার অভিনয় যারা দেখেছেন তারা আজীবন হুমায়ুন ফরীদিকে মনে রাখবেন। এরপরেও একাধিক নাটকে তার অভিনয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখেছেন দর্শকরা। এই নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ‘ভাঙনের গল্প শুনি’, বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’ প্রভৃতি।
১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শেখ নিয়ামত আলীর পরিচালনায় ‘দহন’ এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমাতেই তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। এই সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের কারণে তিনি বাচসাস পুরস্কার পান। ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘লড়াকু’ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে নব্বই দশকে আকাশচুম্বি জনপ্রিয় পান এই অভিনেতা।
সফলতম পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের ২৮টি সিনেমার ২৫টিতেই তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
শক্তিমান এই অভিনেতা আরও কয়েকটি মনে গেঁথে রাখার মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এগুলো হলো- ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’ ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’ ও ‘আহা!’ প্রভৃতি।
শোবিজে তার অবদান অপরিসীম হলেও অর্জনের তালিকা সীমিত। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি একবারই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
তার ব্যক্তিগত জীবন, অর্জনের মতোই বিষাদের ছায়া পড়ে আছে। আশির দশকে মিনু নামের ফরিদপুরের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তার ঘরে দেবযানি নামে এক কন্যা আছে। এরপর তিনি বিয়ে করেন নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তাফাকে। এই সম্পর্ক তার টেকেনি। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।
২০১২ সালে এ সমৃদ্ধজীবন থেমে গেলে বিষাদের ছায়া ভর করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। যে ছায়া এখনও সিনেমাপ্রেমি মানুষের মনে স্থায়ী হয়ে আছে, থাকবে।
‘ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছে’, আবিরের প্রশ্নে অবশেষে মুখ খুললেন ঐন্দ্রিলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।