জুমবাংলা ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউপির জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত ও গীতা রানি। ১৯৯৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। দুজনের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। খর্বকায় হওয়ায় তাদের দুজনকেই শুনতে হয়েছে সমাজের কটু কথা। কিন্তু সেসব কথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে তারা একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন দুই যুগ। এলাকায় তাদের জুটি এখন ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
জানা যায়, একসঙ্গে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সংসার করছেন তারা। একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক। হাজারো অভাবে ছেড়ে যাননি একে অন্যকে। তাদের ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত নজর কেড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।
নীলকান্ত ও গীতা দম্পতির মেয়ে লিপা বলেন, আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন, বিয়ে দিয়েছেন। এখনো আমি যাতে আমার পরিবারকে নিয়ে সুখী থাকি সেজন্য পরিশ্রম করেন। অনেকেই আমার বাবা-মাকে নিয়ে কটাক্ষ করে। আমি কষ্ট পেলেও জানি আমার বাবা-মাই সেরা। আর তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসেন।
নীলকান্তের স্ত্রী গীতা রানি বলেন, আমরা একসঙ্গে থাকতে পেরে অনেক খুশি। অভাব তো সবার সংসারেই থাকে, আমাদেরও আছে। বাইরে কাজ করলে আমাদের পারিশ্রমিক কম দেওয়া হয়। তারপরও থেমে তো আর নেই। আমরা একসঙ্গে ২৫ বছর ধরে আছি। বাকী জীবনটা একসঙ্গে থাকতে চাই।
নীলকান্ত বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন। তিনি আমাকে ভালো রেখেছেন। বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। শুধু যে ঘরটিতে থাকি সেটিই আমার। বাবা-মায়ের ঘরটা মায়ের নামে। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। মা আমার নামে জমিটা দিতে চান। তবে সেটি আমার নামে করে নেওয়ার মতো টাকাও আমার নেই। কয়েক মাস আগে এক দোকানে থাকতাম। সেটা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরি করি। ঘরটাও আমার প্রায় ভাঙা। টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। তারপরও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন। কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে গেছেন। এটি আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আর ঘর সংস্কারের জন্য আমাকে আপনারা সহযোগিতা করতে পারেন।
নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, তারা আমার ইউনিয়নে স্বামী-স্ত্রীর একটি সেরা জুটি। যদিও তারা পারিবারিকভাবে অসচ্ছল। তবে তাদের যে সম্পর্ক এটি সব দম্পতিদের জন্য শিক্ষণীয়। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চেষ্টা করি তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। তার এখন ঘর সংস্কারের প্রয়োজন। সকলে তার পাশে এগিয়ে আসা দরকার।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের শামসুজ্জামান বলেন, তাদের ভালোবাসার কথা শুনে বেশ ভালো লাগল। তাদের দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।