হাসান তনা, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন নিয়ে কটুক্তি করেছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচন্ডী সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মতিন।
গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এই তিনি এই কটুক্তি করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী নিয়ে মাদ্রাসা সুপারের কটুক্তির একটি ভিডিও প্রকাশ পেলে সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে।
গত ১৭ মার্চ মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মতিন তার কক্ষে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন। এতে কোনও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল
না।
আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘জন্মদিবস পালন করা বেদাঁত। হাবশি গোলামও যদি সরকার হয় তবে তার কথা মত কাজ আমাদের করতে হবে। তাই আমরা জন্মদিবসটি পালন করছি।’
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি বিভিন্ন দিবসসহ সরকারি কোন নির্দেশনাই মানেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সমন্বয় শাখা গত ৯ মার্চ পত্র মারফৎ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে বলে। তিনি এ নির্দেশনাও পালন করেননি। এ দিবসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি না থাকার অভিযোগও উঠেছে।
প্রকাশিত ভিডিওতে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মতিন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন, কথাটা বুঝেন নাই। আজকে ১০৩তম জন্মদিন। এই উপলক্ষে আমাদের প্রতিষ্ঠানেও আমরা এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে, পালনের লক্ষ্যে সে উপলক্ষ্যে একটি দোয়া হবে তাই না। এখানে মনে করেন জন্মদিবস শরিয়া মোতাবেক পালন করা বেদাঁত কিন্তু সরকার যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে। সরকার ঘোষণা দিলে বেদাঁত হোক আর যাই হোক তা পালন করতে হবে। এ উপলক্ষে আমরা এখন দোয়া করবো।’
ভিডিওটিতে তিনি আরও বলেন, ‘যে সরকারই আসুক তার আইন মানতে হবে, অনুসরণ করতে হবে। সে যাই হোক সে যদি দেশের একজন হাবশি গোলামও হয়। তার আইন মানতে হবে।’
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোক্তার হোসেন নামে একজন সুপারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনার আহবান জানাস।
সিদ্দিকুর রহমান নামে একজন লেখেন, সুপার সাহেব আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এ কথাটি মাথায় আছে তো। কর্মচারী হয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে বা সরকারের নামে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিবেন না। আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করা দরকার।
হিমেল মিতরা এমজে নামে একজন লেখেন, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সম্প্রতি আক্তারুজ্জামান বড়বাউ নামে একজন মাদ্রাসা সুপার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত সুপার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মদিন ও জাতীয় দিবস ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি ছাড়াই করেন। শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সর্ম্ফকে কটুক্তি করে বলেন-শরীয়তে জন্মদিন পালন বেদয়াত, কেক কাটার কোন দরকার নেই, কেক কাটার পরিবর্তে ওই টাকা দিয়ে চা খাওয়া উত্তম।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এ সুপার সরকারী নিয়ম ও পরিপত্র উপেক্ষা করে ২০২২ সালের ২৫ জুন তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা গ্রহণ করে। এছাড়া এ সুপার জামাতের একজন সক্রিয় সদস্য এবং তিনি ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
রণচন্ডী সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মতিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কথাটি সত্য নয়। ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসলে আমি বলেছি শরিয়ত মোতাবেক বিদআত হলেও সরকারি আইন মানা ফরয। তারা বুঝেছে অন্যটা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম বাবু জানান, আমি কটুক্তিকর ভিডিওটি দেখেছি। এমনকি দোয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র নামও নেয়া হয়নি বলে শুনেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে দোষী হলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।