জুমবাংলা ডেস্ক : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের কারণে দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালকসহ নিম্নবিত্তদের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী ৬ জুন জাতির সামনে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। মূল্যস্ফীতির জটিল হিসাব না বুঝলেও খেটে খাওয়া মানুষের দাবি, সামনে যেন পণ্যের দাম কমে এবং নতুন করে যেন কোনো পণ্যের দাম না বাড়ে। এজন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত আগামী বাজেটে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারা বলছেন, প্রতি বছর বাজেটের পরই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বর্তমানে চাল, ডাল, তেলসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। এ পরিস্থিতিতে বাজেটের পর নতুন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে হবে। বাজেটের পর যাতে এসব পণ্যের দাম না বাড়ে, সেই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী বাজেট নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা যা বলছেন, তাতে সাধারণ মানুষ হয়তো কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেই পারেন। কারণ মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানোর কথা বলছেন দায়িত্বশীলরা। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিনিধিত্বকারী খেটে খাওয়া মানুষগুলোর প্রত্যাশার প্রতিফলন আগামী বাজেটে কতটা হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ঢাকা শহরে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রিকশা চালাচ্ছেন মো. বশির মিয়া। আগামী বাজেটে প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজেট কী, সেটা বুঝি না বাপু। আমরা চাই পরিবার নিয়ে যাতে ভালোভাবে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আমাদের একটাই দাবি, জিনিসপত্রের দাম কমানো হোক। আমরা যাতে চাল, ডাল, তেল, আলু, সবজি কম দামে কিনে খেতে পারি, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
বশির মিয়া বলেন, ‘এখন জিনিসপত্রের অনেক দাম। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় করি তার সবই ব্যয় হয়ে যায়। মাস শেষে হাতে তেমন টাকা থাকে না। সব সময় চিন্তা করি কীভাবে আয় বাড়ানো যায়। বাজেট নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সময় কোথায়?’
আরেক রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এক সময় পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তার প্রায় সবই ঘরভাড়া ও খাওয়ার পেছনে খরচ হয়ে যায়। ছেলে ও মেয়ে স্কুলে পড়ে, ঢাকায় পড়ার খরচ অনেক। জিনিসপত্রের বাড়তি দামের কারণে খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। এ কারণে সব কিছু ভেবে-চিন্তে তিন বছর আগে পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেটের পরেই দেখি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট বেশি হয়। আমাদের চাওয়া খুব বেশি নয়। আমরা শান্তিতে ডাল-ভাত খেতে পারলেই খুশি। তাই আমাদের চাওয়া একটাই, আগামী বাজেটের পর যাতে জিনিসপত্রের দাম নতুন করে না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেওয়া। পাশাপাশি আমরা চাই চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
রিকশাচালক বশির মিয়া ও সাইফুল ইসলামের মতো চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পোশাকশ্রমিক আয়েশা খাতুন ও সবজি বিক্রেতা মো. মিলন। শুধু এই চারজন নন, গত কয়েকদিনে ভ্যান-রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতা, পোশাকশ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন এমন অন্তত ৫০ জনের সঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকেই দাবি জানিয়েছেন, আগামী বাজেটের পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, সবজির দাম যাতে না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেওয়ার।
পোশাকশ্রমিক আয়েশা খাতুন বলেন, ‘ঢাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিকে থাকা এখন কঠিন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই চাল, ডাল, তেল, সবজির অনেক দাম। এখন বাজারে আলুর কেজি ৬০ টাকা। আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে ভর্তা, ডাল, ভাত খাওয়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাছ, মাংস খাওয়া আমাদের কাছে বিলাসিতার মতো। এ পরিস্থিতিতে আমাদের একটাই চাওয়া চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমাদের বাড়তি কোনো চাওয়া নেই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারলেই খুশি।’
ভ্যানে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করা মো. মিলন বলেন, ‘বাজারে এসে অনেকেই একটা-দুইটা সবজি কিনে নিয়ে যান। একসঙ্গে বেশি সবজি কেনার মানুষ এখন খুব কম পাওয়া যায়। যারা একটা-দুইটা সবজি কেনেন, তাদের বেশিরভাই এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) করে কেনেন। আমরাও ভালো অবস্থানে নেই। জিনিসপত্রের বাড়তি দামের কারণে বিক্রিও কম হয়। ফলে আয়ও কমে গেছে।’
‘চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজের দাম কম থাকলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ খুশি থাকে। আমরা গাড়ি, বাড়ি, বস্তাভর্তি টাকা চাই না। পরিবার নিয়ে পেট ভরে খেতে পারলেই খুশি। বাজেটে কী দিয়ে কী হয় তা তো আমরা বুঝি না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, নতুন করে যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে। দাম বাড়লে বড় লোকদের কোনো সমস্যা হয় না। তাই যেসব পণ্য শুধু বড়লোকরা ব্যবহার করে, সেই ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হোক।’ বলছিলেন সবজি বিক্রেতা মিলন।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সংকোচনমূলক বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ জুন জাতির সামনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এই বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হতে পারে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কী হতে পারে, এবারের বাজেট উপস্থাপনের সময় একটি বিশ্লেষণ থাকতে পারে। রাজস্ব আয় বাড়াতে অধিক সংখ্যক মানুষকে করজালের আওতায় নিয়ে আসার ছকও আটা হচ্ছে। এজন্য কিছু নতুন ক্ষেত্রে করারোপ হতে পারে।
সম্প্রতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা আছে। সেগুলো থেকে বাংলাদেশও বাইরে নয়। এ সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য সার, বীজ ইত্যাদিতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হয়। বিদ্যুতেও দেওয়া হয়। খাদ্যসহায়তার জন্য শেখ হাসিনার সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।