জুমবাংলা ডেস্ক : সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হ’ত্যার মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃ’ত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
এখন নিয়ম অনুযায়ী মৃ’ত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার জন্য (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে আসবে। এরপর আসামিদের মধ্যে যারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে ইচ্ছুক তারা আপিল করতে পারবেন। আপিল দায়েরের পর পেপারবুক তৈরি করে শুনানির প্রস্তুতি নেবেন আইনজীবীরা।
তবে সুপ্রিমকোর্টের সামপ্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে মৃ’ত্যুদণ্ড অনুমোদন মামলার জট লেগে আছে।
গত ১৪ই সেপ্টেম্বর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৭৩৭টি ডেথ রেফারেন্স মামলা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এসব ডেথ রেফারেন্সের বিপরীতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মিত জেল আপিলও রয়েছে। অন্যদিকে আপিল বিভাগে ৩২টি মৃ’ত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে ২০১৪ সালে আসা ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে। এসব বেঞ্চে মাসে গড়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে চার থেকে পাঁচটি মামলা। দিন দিন এরকম মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
রায়ের শেষাংশে বলা হয়েছে, রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা চাইলে বা ইচ্ছা করলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করতে পারবেন। রায়ে আরো বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারায় মৃ’ত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়ের অনুলিপি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপার ফেনী বরাবর পাঠানোর জন্য রায়ে বলা হয়েছে।
দেশব্যাপী আলোচিত এ হ’ত্যা মামলার বিচারিক আদালতের রায়ের কপি হাইকোর্টে আসতে ফৌজদারি কার্যবিধির কয়েকটি ধারা অনুসরণ করা হবে। ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এজন্য ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃ’ত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের) নথিপত্র হাইকোর্টে আসবে রায় ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে। তামাদি আইনের ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৃ’ত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সাতদিনের মধ্যে। এরপর যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য তৈরি করা হবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত)।
সাধারণত ডেথ রেফারেন্স শুনানি করা হয় বিভিন্ন উচ্চ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী। তবে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এ রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স শুনানি করে মৃ’ত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখতে বা কমাতে পারেন। আইন অনুযায়ী আসামিরাও সাজা থেকে খালাসের জন্য আপিল করতে পারবেন। তামাদি আইনের ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৃ’ত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হয়। আপিল করলেই বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে যাবে। এটি আইনের বিধান।
ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করবেন দহাইকোর্ট। এরপর এ মামলার কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে আপিল করতে পারবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। এখানে আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এরপরই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির কতিপয় ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের বিধান করা হয়েছে।
আপিল বিভাগে যাওয়ার আগে প্রয়োজন হতে পারে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন)। লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হলে আপিল করতে পারবেন সংক্ষুব্ধ আসামি বা বাদীপক্ষ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৪২ (ক) ধারা অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আপিল দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে সেটি নিষ্পত্তি করতে হয়। আপিলে মৃ’ত্যুদণ্ড বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। দণ্ডবিধির ৫৫ (ক) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আসামিকে ক্ষমা করে প্রাণভিক্ষাও দিতে পারেন।
এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আলোচিত নুসরাত হ’ত্যার রায়টি কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে। সেজন্য বিচারিক আদালত রায়ের নথিসহ যাবতীয় দলিলাদি পাঠিয়ে দেবেন হাইকোর্টে। হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স জন্য পেপারবুক তৈরি করবেন। এরপর শুনানি হবে। শুনানির পর হাইকোর্ট যাদের ফাঁসি বহাল রাখবেন তাদের ফাঁসি কার্যকর হবে। কিন্তু আসামিরা যদি আপিল করেন তাহলে আপিল বিভাগে আবার আপিল শুনানি হবে। আপিল শুনানির পর আপিল বিভাগ আসামিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন এবং আসামিরা যদি রিভিউ না করেন তবে ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। রিভিউ শুনানির পর যদি রায় বহাল রাখেন।
তাহলে রায় কার্যকর করা যাবে। তবে আসামিরা এরপরও আরো একটি সুযোগ পাবেন, সেটি হলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। রাষ্ট্রপতি যদি আসামিদের প্রাণ ভিক্ষা না করেন তাহলে কারাকর্তৃপক্ষ আসামিদের গলায় রশি ঝুলিয়ে মত্যুদন্ড কার্যকর করবেন। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র চাইলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপার বুক ও শুনানি করার উদ্যোগ নিতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ রায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে হাইকোর্টে। কতজনের ফাঁসি থাকবে বা থাকবে না এটা হাইকোর্টের জন্য বিবেচ্য বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তোষ প্রকাশ করছি এ জন্য যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে বিচারকাজটা সম্পন্ন হলো। তবে, আসামিদের মৃ’ত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, রায়টি দ্রুত কার্যকর করা জন্য বাদী পক্ষ কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য আবেদন করেন এবং প্রধান বিচারপতি যদি তা যথাযথ মনে করেন, তবে প্রধান বিচারপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপার বুক তৈরি করে শুনানির উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে, রায়টি কার্যকর করতে দুই বছর সময় দিতেই হবে। কেননা এই সময়ের মধ্যে পেপার বুক তৈরি হবে। শুনানি হবে। এসব ধাপ অনুসরণ করা ছাড়া রায়টি কার্যকর করা যাবে না। সূত্র: মানবজমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।