বিনোদন ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে নেটফ্লিক্স অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নতুন নতুন সিরিজ, সিনেমা, ডকুমেন্টারি মুক্তি দিয়ে দর্শক মাতানোর পাশাপাশি বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের মতো ভারতের বাজারে ব্যবসা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে নেটফ্লিক্স মনে করেছিল বিপুল জনসংখ্যার ভারতে তাদের বাজার বাড়বে। ২০১৮ সালে দিল্লিতে একটি গ্লোবাল বিজনেস সামিটে নেটফ্লিক্সের সিইও রিড হেস্টিংস বলেছিলেন, স্ট্রিমিং সাইটটির পরবর্তী ১০ কোটি সাবস্ক্রাইবার ভারত থেকে আসবে। কিন্তু তিন বছর পার করে দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্সের সেই আশাবাদ বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।
সাবস্ক্রাইবারের হিসাবে ভারতে নেটফ্লিক্স পিছিয়ে থাকছে। মিডিয়া পার্টনার্স এশিয়ার হিসাবে ভারতের স্ট্রিমিং সাইট ব্যবসার মোট মূল্য প্রায় ২০০ কোটি ডলার, যেখানে বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটের মোট গ্রাহক (সাবস্ক্রাইবার) প্রায় ১০ কোটি। এর মধ্যে নেটফ্লিক্সের তালিকাভুক্ত গ্রাহক প্রায় ৫৫ লাখ। অন্যদিকে ভারতে স্ট্রিমিং খাতের অন্যতম প্রতিযোগী ডিজনি প্লাস হটস্টারের গ্রাহক সাড়ে চার কোটির বেশি। অ্যামাজন প্রাইমের গ্রাহক প্রায় দুই কোটি। অর্থাত্ দর্শক খরচ করে স্ট্রিমিং সাইটে কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী হলেও নেটফ্লিক্স সে রকম আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি।
অথচ ভারতে ওটিটির প্রাথমিক জনপ্রিয়তা নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে এসেছিল। ২০১৮ সালে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী ও সাইফ আলী খান অভিনীত, অনুরাগ কাশ্যপের সেক্রেড গেমস সিরিজের মধ্য দিয়ে ভারতে ওটিটি এবং ওয়েব সিরিজ প্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর আগে ওয়েব সিরিজ, টিভি সিরিজ হলেও তা এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। সিরিজটি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে গ্যাংস্টার ঘরানার গল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ, কাশ্যপের পরিচালনা, ডায়ালগ ও যৌন দৃশ্য সবই কমবেশি প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু এরপর সে জনপ্রিয়তা নেটফ্লিক্সের অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে আর দেখা যায়নি। এমনকি এ সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমও প্রথম মৌসুমের মতো প্রশংসা পায়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতে নেটফ্লিক্সের বাজার সম্প্রসারণ না হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত ভারতের মানুষ এখনো টেলিভিশন দেখতে অভ্যস্ত। দেশটির ২০ কোটি পরিবারের নিজস্ব টেলিভিশন রয়েছে, যারা মাসে ৩০০ টাকা খরচ করে টিভির বিনোদন নেয়। তাদের জন্য ওটিটির গ্রাহক হওয়া বিলাসিতা। পাশাপাশি ভারতের দর্শক ড্রামা সিরিজ, খেলা প্রভৃতি দেখতেই আগ্রহী। এর বাইরে অবশ্য বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রোমাঞ্চকর ঘটনা থেকে নির্মিত সিরিজ দেখতেও আগ্রহী। স্ক্যাম-১৯৯২ জনপ্রিয় হওয়ার এটি একটি কারণ। কিন্তু এ ধরনের সিরিজ নেটফ্লিক্সে আসছে না কিংবা এলেও তা কম। নেটফ্লিক্সের কোটা ফ্যাক্টরি সিরিজটি কেবল হিন্দি কনটেন্টের সেরা ১৫-এর মধ্যে রয়েছে।
নেটফ্লিক্স তাদের গ্রাহক খরচ কমিয়ে এনেছে। এর মধ্যে তারা প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচে ৫০-এর অধিক সিনেমা তৈরি করেছে, যার মধ্যে ৩০টি হিন্দি ভাষার। সাম্প্রতিক সময়ে ডিকাপলড, মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করলেও স্কুইড গেম, মানি হাইস্ট কিংবা নারকোসের মতো সাড়া জাগানো কনটেন্ট উপহার দিতে পারেনি। নেটফ্লিক্সের কনটেন্টগুলো কিছুটা জটিল এবং ভারতের গণমানুষের উপভোগের মতো নয়। নেটফ্লিক্স ভারতের মতো করে সিনেমা সিরিজ নির্মাণ না করে তাদের নীতিতে চলছে, যেখানে অন্যান্য ওটিটি ভারতের দর্শকের রুচির কথা মাথায় রেখে কনটেন্ট প্রচার করছে।
যেমন অ্যামাজন প্রাইম হিন্দির পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাভাষী দর্শকের কথা মাথায় রেখে ভারতের ১০টি আলাদা ভাষায় তাদের কনটেন্ট তৈরি করছে। অ্যামাজনের দ্য ফ্যামিলি ম্যান গত বছর ভারতের মোস্ট ওয়াচড হিন্দি স্ট্রিমিং শো হয়েছে। মির্জাপুরের সফলতার অন্যতম কারণ মফস্বল অঞ্চলের প্লট। দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার ধানুশের আসুরানের তেলেগু রিমেক নারাপ্পা এনেছিল অ্যামাজন। এমন আরো সিনেমা রয়েছে অ্যামাজনের ঝুলিতে। নেটফ্লিক্স এ জায়গায় পিছিয়ে। এ প্রসঙ্গে মিডিয়া পার্টনার্স এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিহির শাহ্ মনে করেন, নতুন কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সকে আরো বেশি আঞ্চলিক পছন্দের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
ভারতীয় দর্শকের পছন্দের আরেকটি জায়গা খেলা। বিশেষত ক্রিকেটের প্রতি উপমহাদেশের দর্শকের আগ্রহ কারো অজানা নয়। ডিজনি প্লাস হটস্টার এখানে দর্শকের পছন্দ বুঝে তাদের প্লাটফর্মে আইপিএল নিয়ে এসেছে। সাবস্ক্রাইবাররা সহজেই যেকোনো জায়গা থেকে ক্রিকেট দেখতে পারছে। অ্যামাজনও নিউজিল্যান্ডে হওয়া খেলা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। তাছাড়া সাইটটিতে স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি শপিং সুবিধা রয়েছে।
এ ধরনের সুবিধা সব সাইটে থাকবে না, কিন্তু নেটফ্লিক্সকে আরো নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে বলে সবাই মনে করছেন। নেটফ্লিক্স সে রকম কিছু চেষ্টাও করেছে। গত বছর আঞ্চলিক ভাষার (মালয়ালম) সুপারহিরো সিনেমা মিন্নাল মুরালি এনেছে তারা। কিন্তু একটি-দুটি করে কাজ দিয়ে দর্শক টানা কঠিন। কেননা ভারতে এখন মোট ৭৫টি স্ট্রিমিং সার্ভিস রয়েছে। গ্রাহক আকর্ষণ করতে হলে বাজার এবং রুচি বিশ্লেষণ করে নেটফ্লিক্সকে নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।