আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্টে যত আসন দরকার, মঙ্গলবারের নির্বাচনের আংশিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার পক্ষে সেটি পাওয়া কষ্টকর হতে পারে। খবর বিবিসি বাংলার।
এপর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায় মিস্টার নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী জোট ৫৯টি আসন জেতার পথে আছে। তবে ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের দরকার আরও অন্তত দুটি আসন।
এই নির্বাচনে ৫টি আসন জেতার পথে আছে একটি আরব দল, যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলে ক্ষমতার ভারসাম্যে এই দলটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল কী দাঁড়ায়, তার ওপর নির্ভর করবে আরব-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি।
রাম নামের যে আরব দলটি ৫টি আসন জিতেছে তারা এখনও বলেনি মিস্টার নেতানিয়াহুর সঙ্গে তারা জোট বাঁধবে কিনা। যদি তারা নেতানিয়াহুর দলকে সমর্থন দেয়, সেটা হবে এক অস্বাভাবিক ঘটনা।
সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী নির্বাচনে নেতানিয়াহু বিরোধী জোট পেয়েছে ৫৬টি আসন। আরব দল রামের সমর্থনে তারাও ক্ষমতায় যেতে পারে। কিন্তু এই জোট অনেক বেশি বিভক্ত এবং তাদের পক্ষে একসঙ্গে কাজ করতে পারার সম্ভাবনা কম।
আর যদি কোন পক্ষই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো জোট গড়তে না পরে, তখন ইসরায়েলে গত দুই বছরের মধ্যে ৫ম দফা নির্বাচন করতে হবে।
ইসরায়েলে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। এর ফলে কোন একক দলের পক্ষেই আসলে পার্লামেন্টে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সর্বশেষ ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায়, মিস্টার নেতানিয়াহু যদি ক্ষমতায় থাকতে চান তার একই সঙ্গে আরব দল রাম এবং একটি ছোট্ট কট্টর দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী দল ইয়ামিনার সমর্থন লাগবে।
আরব দল রামের মতোই ইয়ামিনার নেতা নাটালি বেনেটও এখনও ঘোষণা করেননি তিনি সরকার গঠনের জন্য কোন জোটকে সমর্থন করবেন।
তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য যা কল্যাণকর, আমি সেটাই করবো।
তিনি আরও বলেন, মিস্টার নেতানিয়াহুকে তিনি জানিয়েছেন যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ইয়ামিনা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে না।
মঙ্গলবার এই টুইট বার্তায় মিস্টার নেতানিয়াহু তার সমর্থকদের বলেন, আপনারা আমার নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী এবং লিকুড পার্টিকে বিরাট বিজয় এনে দিয়েছেন। লিকুড এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দল। এটা পরিষ্কার, বেশিরভাগ ইসরায়েলি হচ্ছে দক্ষিণপন্থী এবং তারা একটি শক্তিশালী এবং দক্ষিণপন্থী সরকার চায়।
এদিকে প্রধান বিরোধী নেতা ইয়েইর লাপিড, যার মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আটিড ১৭টি আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, দলের ‘বিরাট অর্জনে’ তিনি খুশি।
ইয়েইর লাপিড বলেন, আমি এরই মধ্যে আমাদের জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি এবং আরও কথা বলবো। আমরা ইসরায়েলে একটা বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন সরকার গঠনে যা যা করা দরকার তা করবো।
এবারের নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়ে। এই নির্বাচনকে মিস্টার নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের ব্যাপারে গণরায় হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
২০০৯ সাল হতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটানা ক্ষমতায় আছেন। এর আগে ১৯৯০ এর দশকেও তিনি তিন বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
নির্বাচনে তিনি মূলত কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্য এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরেন।
তবে তার রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, যখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে, তখন তার ক্ষমতায় থাকা উচিৎ নয়। মিস্টার নেতানিয়াহু অবশ্য কোন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত তিনটি নির্বাচনের কোনটিতেই মিস্টার নেতানিয়াহু বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কোন স্থিতিশীল সরকারী জোট গঠন করতে পারেনি।
এখন যে জাতীয় ঐক্যের সরকার, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টযের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত হয়, তা মাত্র সাত মাসের মাথায় গত ডিসেম্বরে ভেঙে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।