নেত্রকোনার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি এবার দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে। এই স্বীকৃতিকে ঘিরে আনন্দে ভাসছে নেত্রকোনাবাসী। সম্প্রতি পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
এই মিষ্টির উৎপত্তি নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোড এলাকায়, প্রায় ১২০ বছর আগে। স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম বালিশ মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও নরম হওয়ায় এর নামকরণ হয় ‘বালিশ মিষ্টি’।
তথ্য মতে, ১৯৪৭ সালের আগেই তৎকালীন কালীগঞ্জ শহরে মিষ্টিটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্বাদ ও গুণমানে অনন্য হওয়ায় এটি এখনও গয়ানাথ ঘোষের নামেই পরিচিত।
গয়ানাথ ঘোষ দেশভাগের সময় ভারত না গিয়ে নেত্রকোনাতেই থেকে যান এবং ১৯৬৯ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে তার দোকান কুমুদ চন্দ্র নাগ-এর কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে কুমুদ নাগ দোকানটি নিখিল মোদক-এর কাছে বিক্রি করেন। তবে দোকানের নাম ‘গয়ানাথ’ নামেই পরিচিত থেকে যায়।
এত বছর পেরিয়ে গেলেও ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি এখনো শহরের বিভিন্ন দোকানে তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে— গয়ানাথ ঘোষের আদি দোকান, শ্রী কৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আলেফ খান সুইটস, খান মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং মুক্তি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার প্রভৃতি।
বালিশ মিষ্টির প্রধান উপকরণ
দুধ, ছানা, চিনি, ময়দা।
প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। ছানা ও ময়দা দিয়ে তৈরি মণ্ড থেকে মিষ্টির কাঠামো গঠিত হয়। এরপর তা চিনির রসে ডুবিয়ে মালাইয়ের প্রলেপ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি ২–৩ দিন ভালো থাকে; শীতকালে স্থায়িত্ব বেড়ে ৭–৮ দিন পর্যন্ত হয়। আকার অনুযায়ী মিষ্টির দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এক সময় এই মিষ্টি বিক্রি হতো মাত্র ৫০ পয়সায়।
বর্তমানে নিখিল মোদকের তিন ছেলে গয়ানাথ ঘোষের আদি দোকান পরিচালনা করছেন। বড় ছেলে বাবুল মোদক বলেন, বালিশ মিষ্টি আমাদের জেলার গর্ব। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা সবসময় মান বজায় রেখে ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। আমাদের দোকানের নামও বদলাইনি। দেশের যেখান থেকেই মানুষ আসুন না কেন, একবার আমাদের দোকানে এসে বালিশ মিষ্টি না খেয়ে ফিরে যান না।
তিনি আরও জানান, তারা নেত্রকোনার বাইরে কোনো শাখা চালান না এবং অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করেন না।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, নেত্রকোনার নাম এলেই সবার মনে বালিশ মিষ্টির কথা ভেসে ওঠে। জিআই স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। অনুমোদন মিলেছে। এখন অফিশিয়াল চিঠি পেলেই আমরা জিআই সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।