হিমালয়ের দেশ খ্যাত রাষ্ট্র নেপালের দীর্ঘদিনের প্রথাগত রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন কাঠমান্ডুর মেয়র ও সাবেক জনপ্রিয় র্যাপার বালেন্দ্র শাহ।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘বালেন’ নামে পরিচিত ৩৫ বছর বয়সী এই নেতা সাবেক টেলিভিশন সঞ্চালক রবি লামিছানের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। আগামী ৫ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে গঠিত জোট থেকে বালেন্দ্র শাহকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত ব্যাপক ‘জেন–জি’ আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর নেপালের রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সেটিকে আরও স্পষ্ট করেছে।
দলীয় সমঝোতা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি নির্বাচনে জয়ী হলে বালেন্দ্র শাহ প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং ৪৮ বছর বয়সী রবি লামিছানে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকবেন। সেপ্টেম্বরের গণআন্দোলনে উত্থাপিত দুর্নীতিবিরোধী ও সংস্কারমূলক দাবিগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন এই দুই নেতা। ওই আন্দোলনে ৭৭ জন নিহত হন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতেই সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিপিন অধিকারীর মতে, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এটি রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির একটি কৌশলগত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
নেপালের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভের পর ভোটার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যাদের বড় অংশই তরুণ। এই তরুণদের কাছে বালেন্দ্র শাহ একজন প্রতীকী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সক্রিয় ভূমিকা তাকে ব্যাপক জনসমর্থন এনে দেয়। যদিও সমালোচকদের একাংশের দাবি, তিনি আন্দোলনের সময় সরাসরি মাঠে খুব বেশি উপস্থিত ছিলেন না এবং মূলত আড়াল থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবুও কাঠমান্ডুর মেয়র হিসেবে তার প্রশাসনিক জনপ্রিয়তা এবং একজন র্যাপার হিসেবে সাংস্কৃতিক পরিচিতি তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে।
গত তিন দশক ধরে নেপালের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেস। তবে এবারের নির্বাচনে বালেন্দ্র শাহ ও রবি লামিছানের জোট এই দুই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। যদিও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত রবি লামিছানে বর্তমানে সমবায় তহবিল অপব্যবহারের একটি মামলায় জামিনে রয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে : মির্জা ফখরুল
অন্য দিকে নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাত এই জোটকে গুরুত্ব দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। রয়টার্সকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বালেন্দ্র শাহ ও রবি লামিছানেকে ‘বিতর্কিত’ নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটাররা অভিজ্ঞ ও পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোকেই বেছে নেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


