বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : কোনো কনভেনশন হল বা বিজনেস মিটিং নয়, একেবারে আড্ডার ছলে নৈশভোজের টেবিলে টেক দুনিয়ার তিন হোতা লেরি এলিংসন, ইলন মাস্ক আর জেনসেন হুয়াং নিয়েছেন চমকপ্রদ কিছু সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) আসছে বড় রকমের চমক।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক রেস্টুরেন্টে এ তিন ধনকুবের আগামীর এআই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং পরবর্তীতে একে অন্যকে সমন্বয় ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন লেরি এলিংসন।
একদিকে, বিশ্বের জনপ্রিয় ডাটা সেন্টার ওরাকলের প্রধান নির্বাহী (সিইও) লেরি এলিংসন, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির কর্ণধার টেসলার মালিক ইলন মাস্ক — এ দুজনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিখ্যাত চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং। আলোচনার মূল বিষয় ছিল, এনভিডিয়ার সাহায্যে টেকনির্ভর এ দুটি কোম্পানি আগামী বিশ্বে এআই-এর ধারণাকে আরও উন্নত করতে চান।
এর আগে, ওরাকল জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য কত অল্প খরচে কতটা নিখুঁত করে এআই বাজারে আনা যায়, তা নিশ্চিত করা। অবশ্য মাস্কের হিসাব দ্বিমুখী — একদিকে, টেসলার অটো ড্রাইভিংয়ে এআই যোগ করা; অন্যদিকে, নতুন প্রতিষ্ঠান এআইএক্স দিয়ে সারা বিশ্বে একরকম হৈচৈ ফেলে দেয়া।
দুই ধনকুবেরের টেক নিয়ে এমন স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন এআই তৈরির প্রচুর চিপ। আর এসব চিপের একাধিপত্য এখন হুয়াংয়ের প্রতিষ্ঠানের দখলে। তাইতো নৈশভোজে দাওয়াত দিয়ে এক টেবিলে বসে হুয়াংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা এলিংসন ও মাস্কের।
ইয়াহু ফাইন্যান্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এলিংসন এবং মাস্ক এমন এক এআই বাজারে আনার জন্য কাজ করছেন, যাদের বুদ্ধিমত্তা হবে মানুষের সমতুল্য৷ কিন্তু এ দক্ষযজ্ঞ সফল করতে দুজনের প্রয়োজন প্রচুর গ্রাফিকস প্রসেসর চিপস (জিপিইউ)। যতই লাখ কোটি টাকার ছড়াছড়ি থাকুক এ দুই ধনকুবেরের, সেরা মানের শক্তিশালী জিপিইউ পাওয়া যাবে শুধু এনভিডিয়ার থেকে। সেজন্যই হুয়াংকে নিয়ে এক টেবিলে বসা, এতোকিছুর আয়োজন।
বর্তমানে ওরাকলের ১৬২টি ডাটা সেন্টার আছে। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানটির। এআইকে শক্তিশালী করতে ওরাকলের এসব ডাটা সেন্টারে আপাতত ৩২ হাজার জিপিইউ প্রয়োজন। এনভিডিয়া জানায়, শুধু ৩২ হাজার নয়, ওরাকলের কাজকে গতিশীল করতে চিপ প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে এক লাখ ৩২ হাজার জিপিইউ সরবরাহ করবে। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ওরাকলকে।
অন্যদিকে ইলন মাস্কের স্বপ্ন টেসলার স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে শক্তিশালী এআই যোগ করা, যা হয়ে উঠবে মানবচালকের যুৎসই বিকল্প। সেলফ ড্রাইভিংয়ে সফটওয়্যারের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এ বছরের মধ্যেই ৫০ হাজার জিপিইউ চিপ প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানটির। আর এ জিপিইউর মোক্ষম যোগানদাতা হতে পারে এনভিডিয়া — এমনটাই বিশ্বাস মাস্কের।
সমস্যা হচ্ছে, এলিংসন আর মাস্কের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে এতোদিন এনভিডিয়া বাজারে চিপ সরবরাহ করেনি। এখন ত্বরিতগতিতে প্রতিষ্ঠান দুটি যেভাবে এনভিডিয়াকে চিপের জন্য পীড়াপীড়ি করছে, তাতে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করছেন টেক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, এতদিন টেসলা এবং ওরাকল এনভিডিয়ার বড় কোনো ক্রেতা ছিল না। হঠাৎ করে এ বছরের শেষ কয়েক মাসে হুয়াংয়ের কাছে তারা যে কাতর আর্জি জানিয়েছেন, এ দুই ধনকুবের তা পূরণ করতে চাইলেও বড় রকমের কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে যেতে হবে চিপ প্রতিষ্ঠানটিকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।