মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ, ইউএনবি: পা হারানো রোহিঙ্গা শিশু সাইফুল ইসলামের (৭) বাস বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু শিবির কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে। বাস্তুচ্যুত এ শিশুর স্বপ্ন বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়া।

মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাঁ পা হারানো সাইফুলকে ভয়ংকর পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে। দুই বছর আগে পাঁচ বছর বয়সী সাইফুল তার বাবার সাথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরে তাদের বাড়ির কাছে বাজারে গিয়েছিল। ফেরার পথে গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে তারা। পায়ে গুলি লাগলেও হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যায় সাইফুল। কিন্তু তার বাবা মারা যান।
রাখাইনে নির্যাতন থেকে বাঁচতে গুলি লাগার মাত্র আট দিন পর সাইফুল তার মা আয়েশা বেগম (তখন বয়স ছিল ২১) ও দুই ছোট বোন হোসনে আরা ও মিনারা বেগমের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
তবে ভাগ্য খারাপ থাকা সাইফুল এক বছরের মধ্যেই কক্সবাজারের উদ্বাস্তু শিবিরে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। আঘাত লাগে সেই বাঁ পায়েই। এবার পায়ের নিচের অংশ বাধ্য হয়ে কেটে ফেলে দিতে হয়।
আয়েশা বেগম জানান, তার পারিবারের বাকি যারা জীবিত ছিলেন- তার সন্তান, বাবা-মা ও ভাইদের সাথে তিনি বাংলাদেশে আসেন।
আয়েশা যখন জানতে পারেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) এক কর্মসূচির আওতায় সাইফুল তার হারানো পায়ের জায়গায় কৃত্রিম পা পেতে যাচ্ছে তখন তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিও পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সাইফুল আবারও হাঁটতে পেরে কৃতজ্ঞ। সে এখন বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়, কারণ তাদের কল্যাণেই সে যে হাঁটতে পারছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারলেও সাইফুল এখন সাবধানে ও আস্তে ধীরে ফুটবলে লাথি দিতে পারে।
কুতুপালং শিবিরের পাহাড়ি পথে-প্রান্তে এখন সাইফুলের হাঁটার সঙ্গী জান্নাত। সাত বছর বয়সী এ মেয়েটিও একটি কৃত্রিম পা পেয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, কুতুপালং বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু শিবির হয়ে উঠেছে। মাত্র ১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ এলাকায় ছয় লাখের অধিক মানুষের বাস।
আইসিআরসির কর্মসূচির আরেক উপকারভোগী আলম। ১৯৯১ সালে স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা হারান তিনি। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে অভিযান থেকে বাঁচতে পরিবারের সাথে পালিয়ে আসেন আলম। তিন দিন হামাগুড়ি দিয়ে পথ চলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা শিবিরে এসে কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য আইসিআরসির কর্মসূচিতে মনোনীত হন আলম এবং এখন তিনি পরিবারকে কিছুটা সাহায্যও করতে পারছেন।
দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা আলম উদ্বাস্তু শিবিরে একটি পোশাক তৈরির দোকানে সেলাই মেশিন চালান। প্রতি দিন তার আয় থাকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেলাই মেশিন চালাতে কৃত্রিম পা দুটি ভালোই সহায্য করছে তাকে।
আইসিআরসির মুখপাত্র (জনসংযোগ কর্মকর্তা) রায়হান সুলতানা তমা ইউএনবিকে জানান যে তাদের সংস্থা গত এক বছর ধরে কক্সবাজারে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির ও তাবুতে কৃত্রিম অঙ্গ ও ডিভাইস সরবরাহে কাজ করছে।
তারা সাইফুল, জান্নাত ও আলমকে কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে তারা পুনরায় স্বাভাবিক বা যতটা সম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি জীবনে ফিরে যেতে পারে।
এ জন্য আইসিআরসি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন শিবিরে বাস করা ১১৩ পঙ্গু রোহিঙ্গার জন্য কৃত্রিম পা ও হাত বা এমন অন্যান্য ডিভাইসের ব্যবস্থা করেছে। সূত্র: ইউএনবি