নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি আবার ভাঙনের মুখে। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে টানাপোড়েন ছিল। এই টানাপোড়েন থেকে পঞ্চম দফায় দলটি ভাঙছে-এটা এখন অনেকটা পরিস্কার। আগামী নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতৃত্ব জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।
৯ম কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছেন জি এম কাদের। বর্তমানে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা। তিন বছর মেয়াদি কমিটির সময় শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। কিন্তু তার আগেই জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। আগামী ২৬ নভেম্বর রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ঘোষিত জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে দলীয় পদ হারানো মসিউর রহমান রাঙ্গাকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীরকেও যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে আরও ১৭ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের একজন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়ে সম্প্রতি জাতীয় পার্টি থেকে বহিস্কার হওয়া সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মানিক।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ গত ৩০ আগস্ট চিঠি দিয়ে দলের কাউন্সিল ডাকেন। তাঁর এ তৎপরতাকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করেন।
পাল্টা হিসেবে দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাঁকে সরাতে পরের দিন স্পিকারকে চিঠি দেন জি এম কাদের। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাই চিঠি পৌঁছে দেন। দেড় মাস হতে চললেও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি স্পিকার।
তবে পরবর্তী সময়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা উল্টে যান। চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলীয় পদ হারান। গত শনিবার জাপার প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথ সভায় তাঁকে স্থায়ী বহিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সম্মেলনের তৎপরতা বন্ধ না করলে রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকেও বহিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
জি এম কাদেরের প্রেসসচিব-২ দেলোয়ার জালালি কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন, তা সম্পূর্ণ অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও কাউন্সিল ঘোষণার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধান পৃষ্ঠপোষকের। কাউন্সিলে গঠিত একটি বৈধ কমিটি ভেঙে দেয়ার কোনো ক্ষমতা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কারো নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন।’
জানতে চাইলে গোলাম মসীহ বলেন, জাতীয় পার্টি অনেক পুরনো একটি দল। রওশান এরশাদের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করা হবে। অতীতে যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। পাশাপাশি তরুণদেরও দলে আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের টার্গেট আগামী সংসদ নির্বাচন।’
এদিকে, রাজধানীর মিন্টো রোডের বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। থাইল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি সেখানেই উঠবেন। এই বাসভবন থেকে দলীয় কর্মকান্ড চালাবেন তিনি।
জি এম কাদেরপন্থী একাধিক নেতা বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের একটি কার্যকর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কথা বলছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন জোটের বিপরীতে বিরোধী দলগুলোর একটি জোট গঠন ও বিএনপির সাথে জোট করার আলোচনাও চলছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব থেকে জি এম কাদেরকে সরাতে দলের কাউন্সিল আহ্বান করেছেন রওশন এরশাদ।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এক পর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দল থেকে বের হয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করেন। তারপর থেকেই জাতীয় পার্টি ভাঙছে। দ্বিতীয় দফায় ফাটল ধরান নাজিউর রহমান মঞ্জু। তিনি আরেকটি জাপা গঠন করেন। সংক্ষেপে নাম দেন বিজেপি। বর্তমান দলটির প্রেসিডেন্ট আন্দালিভ রহমান পার্থ। তৃতীয় দফায় ফাটল ধরান এম এ মতিন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ বেরিয়ে গিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তার মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেছেন জামাল হায়দার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।