আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটা পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া মানেই জীবনে ব্যর্থ হওয়া নয়। আমাদের চারপাশেই এমন অনেকে রয়েছেন, যারা স্কুলের পরীক্ষায় একেবারেই ভালো ফল করে উঠতে পারেননি, কিন্তু আজ তারাই ক্লাসে প্রথম হওয়া সেই সহপাঠীকেও অনেক পেছনে ফেলে এসেছেন।
এমনই একজন সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন ভারতীয় যুবক পিসি মোস্তাফা। কেরালার ওয়ানাডের এক প্রত্যন্ত এলাকায় তার জন্ম। পরিবারের কেউই পড়াশোনা করেননি। মোস্তাফাই পরিবারের প্রথম সন্তান যিনি স্কুলে ভর্তি হন। ষষ্ঠ শ্রেণিতেই ফেল করে বসেন। তার পরিবারের যা অবস্থা ছিল, তাতে ফেল করা মানেই ভবিতব্য ছিল বাবা কোনো না কোনো কাজে তাকে লাগিয়ে দেবেন। তেমনটাই হয়েছিল। একটা ছোট কারখানায় দিনমজুরের কাজে লাগিয়ে দেন বাবা। সেই ছোট বয়সেই নিজের ভবিষ্যৎটা দেখে নিয়েছিলেন মোস্তাফা।
তবে পড়াশোনা ছাড়া যে একটা ভালো জীবন পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন। কিছুদিন কাজ করার পরই তিনি নিজেকে দ্বিতীয় সুযোগ দেন। খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন। স্কুল পাস করে কালিকটের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ফেলেন। প্রথমে বেঙ্গালুরুর মোটোরোলা কোম্পানিতে কাজ পান তিনি। তার পর সেখান থেকে প্রমোশন পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান কয়েক বছরের জন্য। বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে বেঙ্গালুরু থেকে এমবিএ করেন মোস্তাফা। বেঙ্গালুরুর থিপাসানদ্রাতে এক আত্মীয়র একটি দোকানে মাঝে মধ্যেই বসে গল্পগুজবে কাটিয়ে দিতেন তিনি। খুব অবাক হয়ে দেখতেন, প্রতিদিনই ইডলি এবং দোসার ব্যাটার মহিলারা দোকান থেকে কিনে নিয়ে যান। ইডলি-দোসার এই ব্যাটারের চাহিদাও প্রচুর।
সে যত খারাপ মানেরই হোক না কেন, দোকানে রোজ শেষ হয়ে যেত সেগুলো। তা থেকেই প্যাকেজড ফুড ব্যবসার কথা মাথায় আসে তার। প্রথমে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কয়েকজন মিলে ইডলি-দোসা বানানোর ব্যাটার তৈরির ব্যবসা শুরু করে দেন। চালের গুঁড়া কিনে ব্যাটার বানাতে শুরু করেন। রাতারাতি হিট হয়ে যায় পরিকল্পনা। প্রথমে ব্যাটার খুব একটা ভালো না বানাতে পারলেও যত দিন যায় আদর্শ ব্যাটার বানাতে শুরু করেন তারা। একটি ছোট দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিছু ব্যাটার বানিয়ে আশপাশের মহিলাদের মধ্যে তা বিতরণ করেন।
২০০৮ সালে তারা ৫০ বর্গফুটের একটা ছোট রান্নাঘর ভাড়া নেন তিনি। সঙ্গে কেনেন একটা গ্রাইন্ডার। স্কুটারে করে ব্যাটারগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে শুরু করেন তারা। একটু জনপ্রিয় হলে কোম্পানির নাম দেন বেস্ট ফুড প্রাইভেট লিমিটেড।
পরে নাম বদলে রাখেন আইডি স্পেশাল ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১০ সালে তাদের ব্যবসা ৪ কোটি ছুঁয়ে ফেলে। ততদিনে ৪০ জন কর্মচারীও নিয়োগ করে ফেলেন মোস্তাফা। এখন ৫০ কেজি ব্যাটার সরবরাহ করে তার কোম্পানি। সঙ্গে যোগ হয়েছে ৪০ হাজার চাপাটি, দুলাখ পরোটা, দুহাজার টমেটো এবং ধনেপাতার চাটনির প্যাকেট। দেশে বেঙ্গালুরু, মাইসুরু, ম্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, পুনে এবং বিদেশে শারজাসহ আট শহরে পৌঁছেছে তার কোম্পানি। ডেলিভারির জন্য কোম্পানির নিজস্ব ২০০টা গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে কর্মচারীর সংখ্যা ৬৫০। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ফেল করা সেই ছেলেটার কোম্পানি ২০১৯-২০ সালে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা টার্নওভার আশা করছে। তবে দরিদ্রতা এবং সঠিক পরিবেশের অভাব তার পড়াশোনায় প্রথম থেকেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে দেশব্যাপী পরিচিত তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।