জুমবাংলা ডেস্ক : অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করে পদত্যাগ করেছে আদালত গঠিত ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বোর্ড, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আর নতুন পরিচালানায় থাকছেন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী শাশুড়িসহ ৫ জন।
পদত্যাগের পর কোম্পানিটির অডিট রিপোর্টের সঙ্গে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে মতামত দিয়েছেন পদত্যাগ করা বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘অডিট রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্যাবলি এবং কাগজপত্রের ভিত্তিতে এ কথা স্পস্টভাবে বলা যায় যে, এইভাবে ব্যবসা পুনরায় চালানো অসম্ভব, যদি সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি, অনিয়ম এবং অব্যস্থাপনা সম্পূর্ণ দূর করে ব্যবসা চালানো না হয়। ’
প্রতিষ্ঠানটির অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সাবেক এই অতিরক্তি সচিব বলেন, ‘ইভ্যালির বিশাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কোনো স্তরেই কোনো প্রকার জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা ছিল না। যেটা একটা সফল ম্যানেজমেন্টের মূল স্তম্ভ। অডিট রিপোর্টে কোম্পানির আর্থিক অবস্থান চিহ্নিত করার মতো কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি বা ইভ্যালির প্রাক্তন ম্যানেজমেন্ট তা মেইনটেইন করেনি। ’
‘অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেনের সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি, এই টাকাগুলো কোথায় কিভাবে খরচ করা হয়েছে, তা একটি বড় প্রশ্নের উদ্রেক করে, যা ছিল এই কোম্পানির সবচেয়ে বড় অনিয়ম। ’
তবে কিভাবে এই কোম্পানি পুনরায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘ইভ্যালির ব্যবসা পুনরায় চালু করার জন্য অবশ্যই নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে বা দেশি/বিদেশি বিনিয়োগকারী আনতে হবে। ইভ্যালির সমস্ত ডাটা সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই লোকাল সার্ভার ব্যাক-আপ হিসেবে রাখতে হবে। বাহুল্য খরচ আপাতত তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পরিহার এবং সর্বনিম্ন লোকবল দিয়ে সর্বোচ্চ কাজ করিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি খরচের হিসাব রাখতে হবে যথাযথভাবে। নতুন বিনিয়োগ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি অফারে কতটি পণ্য বিক্রি করা হবে, কতটি বিক্রি হয়েছে, তার হিসেব গ্রাহকের কাছে পাবলিক বা ওপেন রাখা। এসব পদক্ষেপ প্রতিপালন করতে পারলেই কেবল বলা যাবে, ইভ্যালির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। ’
এক গ্রাহক ইভ্যালি অনলাইন শপিংমলে মে মাসে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি মোবাইল ফোনভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেছেন। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনার রশিদও দিয়েছেন। কিন্তু পণ্য না পেয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
তার আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির সব নথি আদালতে আসার পর একটি বোর্ড গঠন করে আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে বোর্ডের অন্য সদস্যরা ছিলেন- সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, এফসিএ ফখরুদ্দিন আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবীর। মাহবুব কবীর মিলন এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর ধারাবাহিকতায় আদালত একটি ফার্ম দিয়ে অডিট করতে বলেন। পাশাপাশি শেয়ার হোল্ডার রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরীন, শামীমার মা ফরিদা তালুকদার লিলি, বোনজামাই মামুনুর রশীদ স্বাধীন পরিচালক হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধি নিয়োগে আদেশ দেন।
সে অনুসারে ওই তিনজনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড.কাজী কামরুন নাহার ও ই-ক্যাবের সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনকে বোর্ডে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন এবং অডিট প্রতিবেদন তৈরির পর স্বাধীনতা (লিবার্টি) অনুসারে আদালত গঠিত বোর্ড পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করে অডিট রিপোর্ট, বোর্ডের মতামত ও এমডির প্রতিবেদন ২১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করেন।
প্ররতারণার অভিযোগে মামলার পর গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়।
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল শামীমা জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু রাসেল এখনো কারাবন্দি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।