বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু। এবার তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এ খবরে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার নিয়োগ বাতিল না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের প্রথম দিকে দেশজুড়ে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
এরপর ২৫ জুলাই তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু প্রায় ৫০০-৭০০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় আন্দোলনকারীদের ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার জন্য লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে তিতুমীর কলেজে হামলার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যান বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়। এমনকি কলেজের ছাত্রাবাস থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল, ফ্যান, টেলিভিশন ও নগদ টাকাসহ আনুমানিক ৪০ লাখ টাকার মালামাল চুরির অভিযোগ আনা হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
তবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা মালেকা আক্তার বানুকে ২ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক বাইজিদুর রহমান সিয়াম জাগো নিউজকে বলেন, অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু ৭০০ জন জুলাই যোদ্ধার বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এখন উনি অধ্যক্ষ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসবেন, তা কীভাবে সম্ভব! মালেকা বানু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে চাকরি করবেন এই দুঃসাহস কীভাবে করেন? আমরা ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দেবো। যেন স্বৈরাচারের এই দোসরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে দেওয়া না হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তী বলেন, আজ যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না হতো তাহলে মালেকা বানুর আসামি করা আমাদের ৭০০ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হয়ে যেত। উনি পরিকল্পিতভাবে তা করেছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর মালেকা বানুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেখতে চাই না। তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
ছাত্রশিবিরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করেছিলেন মালেকা বানু। তার পদোন্নতি শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি। আমরা অবিলম্বে তার পদোন্নতি বাতিলের দাবি জানাই।
এদিকে ওপরের নির্দেশে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বলে দাবি করেন অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু।
তিনি মোবাইলে বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম মেনে চাকরি করি। যখন যে থাকবে তার দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলি। আমাকে মামলায় বাদী করানো হয়েছে। তখনকার যিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি বাদী খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেউ বাদী হতে রাজি হননি। উনার কথায় আমি রাজি হয়েছিলাম। তাতে কি লেখা ছিল আমি জানি না। আমি শুধু সই করেছিলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।