সুলতান মাহমুদ, বাসস: পদ্মা সেতু চালুর পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ ও নির্মল আনন্দলাভে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর নড়াইলের অরুনিমা রিসোর্ট।যে কোন উৎসবে এখানে পর্যটকদের পদচারণা বৃদ্ধি পায়।ক্লান্তি-অবসাদ দূর করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অরুনিমা রিসোর্টে ভ্রমণে আসেন দেশী-বিদেশী পর্যটকরা। ঈদুল আযহার পরদিন থেকে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে এখানে।
মাগুরা থেকে স্ত্রী, ছেলে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গত মঙ্গলবার অরুনিমা রিসোর্টে ঘুরতে আসেন উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: আবু সায়েম বিশ্বাস।স্ত্রী তৌফিকা নাসরিনসহ ছেলে এবং ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে এদিন পড়ন্ত বিকেলে ঘুরতে আসেন। তিনি জানান,প্রকৃতির মাঝে আনন্দ উপভোগের অন্যতম স্থান হচ্ছে অরুনিমা রিসোর্ট।প্রকৃতির সৌন্দর্যের সবকিছুই এখানে আছে।
ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে আসা ফাতিমা শাম্মী জানান,প্রাকৃতিক আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয় অরুনিমা।পদ্মা সেতু চালুর আগে এখানে একবার এসেছিলাম।সেতু চালুর পর দ্বিতীয়বার আসলাম।সেতু চালুর আগে এখানে আসতে সময়ক্ষেপণসহ অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। সেতু চালুর পর অল্প সময়ের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে অরুনিমায় আসতে পেরেছি। পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।এ রিসোর্টের প্রাকৃতিক অপরুপ দৃশ্য দেখার মতো।বিকেলে গাছ-গাছালির ডাল-পালায় সারিবদ্ধভাবে ডানা মেলে পাখি পড়ার দৃশ্য তাকে বারবার আকর্ষণ করে বলে তিনি জানান।
ঢাকা থেকে আসা সাভার প্রাইম হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা: কে.এম আমিনুল ইসলাম বলেন, অরুনিমায় এসে এখানকার সবকিছুই ভালো লাগছে।প্রাকৃতিক পরিমন্ডলে গড়ে তোলা অরুনিমা রিসোর্টের নান্দনিকতা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মনকে নাড়া দেয়।এখানকার বিশালাকৃতির পুকুরে নৌকায় ঘোরা, মাছ ধরা, ফলদ-বনজ গাছসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ এবং রিসোর্টে কাছ থেকে পাখি দেখা পর্যটকদের আনন্দ উপভোগে দিয়েছে পূর্ণতা।
নড়াইল শহর থেকে প্রায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী ঘেঁষে অবস্থিত নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়া উঠা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব।রিসোর্টটি সবুজ গাছ-গাছালিতে পরিবেষ্টিত। সারা বছরই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসতে দেখা যায় এখানকার গাছগছালিতে।শীতকালে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির প্রাধান্য বেশি থাকে। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রিসোর্টের গাছে পাখি পড়ার দৃশ্য ও পাখির কিচির মিচির শব্দ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের মোহিত করে।রিসের্টের বিশাল আয়তনের পুকুরের মাঝখানে নির্মিত বোট আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে পাখিপ্রেমীরা বিভিন্ন দিক থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখি পড়ার দৃশ্য ও পাখির কোলাহল উপভোগ করে থাকেন। প্রায় প্রত্যেক দিন ঢাকা, খুলনা,গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন।মাঝেমধ্যে বিদেশী পর্যটক ও অতিথিরা এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে এসে রাতযাপন করে থাকেন বলে জানালেন অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র হোটেল, মোটেল,রিসোর্ট এন্ড গেষ্ট হাউজ ডেভেলপমেন্ট ষ্টান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির কারণে পাখি শিকার বা পাখিদের প্রতি বিরুপ আচরণ বন্ধ থাকায় এ রিসোর্টের গাছপালা সারবছরই পাখিদের দখলে থাকে।
পাখি ও প্রকৃতি প্রেমিক অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য খবির উদ্দিন আহমেদ জানান,পর্যটকদের মনের খোরাক মেটাতে ও নির্মল আনন্দদানে প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবটি।শহরের অধিবাসী তথা কর্মব্যস্ত মানুষ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা এখানে ঘুরতে এসে প্রাকৃতিক পরিবেশের সবটুকু আনন্দ পেয়ে থাকেন।এ রিসোর্টে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি পুকুর।পুকুর ভরা রয়েছে দেশী প্রজাতির মাছ।পুকুর বা জলাশয়ে ভেসে থাকা বিশাল আকৃতির মাছগুলোও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।পরিবারের সদস্য কিংবা স্বজনদের নিয়ে দীঘি আকৃতির পুকুরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর জন্য জন্য রয়েছে সাম্পানের ন্যায় তৈরি নৌকা।রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাঝে-মধ্যে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার পুকুরে।রয়েছে সুইমিং পুল ও ঝুলন্ত সেতু।পর্যটকদের ক্লান্তি দূর করতে নৈসর্গিক রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের গাছ ও ফলদ বৃক্ষ।গোলাপ,বেলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের সুরভিত ঘ্রাণ রিসোর্টের পরিমন্ডলকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আপন মনে ঘুরাঘুরি করে থাকে।আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ট্যুরিজমের উপযোগী করা হলে এদেশে বিদেশী পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে। দূর-দূরান্তের পর্যটকদের জন্য রয়েছে রিসোর্ট অভ্যন্তরে খাওয়া ও রাতে আবাসনের ব্যবস্থা।এখানে ১২টি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষসহ মোট ৩৫টি থাকার রুম রয়েছে।দিনরাত সার্বক্ষণিক রয়েছে জোরদার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।সরকারি দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সব শ্রেণী পেশার মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিতে শহুরে জীবন ছেড়ে অধিকাংশ সময় এখানে কাটান তিনি।তার রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবে এসে মানুষ আনন্দ পেলে তিনিও আনন্দ পান বলে জানান অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের কর্ণধার খবির উদ্দিন আহমেদ।
অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ জানান, এখানকার এসএম সুলতান লাউন্স রুম ও চিত্রা কনভেনশন হল রুমে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের সভা,সেমিনার ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।দেশের মধ্যে একমাত্র বেসরকারিভাবে স্থাপিত অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে গলফ খেলারও সুব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।