জুমবাংলা ডেস্ক : প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে। গত চার দিনে অন্তত ৩০ হাজার ৭৬টি মোটরসাইকেল সেতু ও ফেরি ব্যবহার করে পদ্মা ও যমুনা নদী পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনে ১১ হাজার ৭৭৭টি মোটরসাইকেল বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা নদী পার হয়েছে। বাকি ১৮ হাজার ২৯৯টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে পদ্মা নদী। এ জন্য তারা ব্যবহার করেছে পদ্মা সেতু, শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট ফেরি।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু : দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল ৬টায় মোটরসাইকেলের জন্য পদ্মা সেতুর দরজা উন্মুক্ত করা হলেও মধ্যরাত থেকে বাইকাররা টোল প্লাজায় জড়ো হতে থাকেন। একটি বুথ দিয়ে টোল নেওয়ার কথা থাকলেও বাইকারদের উপচে পড়া ভিড়ে দুটি বুথ দিয়ে মোটরসাইকেলের টোল নেওয়া শুরু হয়।
এ সময় তাঁদের মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হয় বাইকারদের জন্য। দড়ি দিয়ে তৈরি করা ব্যারিকেডের মধ্য দিয়ে টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে যান তাঁরা। টোল দিয়ে দ্রুতই ছুটে চলেন পদ্মা সেতুর দিকে। পুলিশ সদস্যদের দেখা যায় নিয়ম-কানুন মেনে সেতুতে বাইক চালানোর পরামর্শ দিতে। অনেক বাইকার খুশিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সালাম দিয়ে ঈদের কুশলও বিনিময় করেন।
মোটরসাইকেল চালিয়ে খুলনায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে পদ্মা সেতুতে উঠছেন আমানুল্লাহ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি, এমনিতেই আনন্দ লাগছে। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দিয়ে যাচ্ছি। আনন্দের নতুন একটি মাত্রা যোগ হলো। আমরা নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল চালাব।’
নড়াইলের বাসিন্দা মো. সুমন। চাকরি করেন নারায়ণগঞ্জে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে কথা হলে সুমন বলেন, ‘এই ঈদে দুটি বোনাস পেয়েছি। একটি হচ্ছে আমার চাকরির, অন্যটি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাত হাজার ১৩০টি মোটরসাইকেল পদ্মা সেতু পারাপার হয়। গত বছরের ২৬ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার দিন ৩০ হাজার মোটরসাইকেল পদ্মা সেতু পার হয়।
ওই দিন সেতুতে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়। পরদিন থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার : গতকাল পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার। শুরুতে আমরা তীব্র সংকটের মুখে পড়ি। তখন মোটরসাইকেল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। সময়ের পরিবর্তনে আমার মনে হয় চালকরা যাঁরা মোটরসাইকেলে যেতে-আসতে আগ্রহী, তাঁদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ ও দায়িত্বশীলতা জাগ্রত হয়েছে।’
মোটরসাইকেলশূন্য শিমুলিয়া ফেরিঘাট : পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় গতকাল শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথে চলাচলকারী দুটি ফেরি মোটরসাইকেলশূন্য হয়ে পড়ে। দুটি ফেরিকেই ঘাটে নোঙরে থাকতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে এ নৌপথে মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য বিআইডাব্লিউটিসি দুটি ফেরির ব্যবস্থা করে। মঙ্গল ও বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়। প্রথম দিন এক হাজার ২০০টি এবং পরের দিন এক হাজার ৩০০ মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়।
বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ তৈরি হওয়ায় ফেরি পার হতে বাইকাররা আসছেন না। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। বাইক বা যানবাহন এলে আমরা পার করব।’
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট : গত ১৭ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চার দিনে আট হাজার ৬৬৯টি মোটরসাইকেল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট ফেরিঘাট ব্যবহার করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছে। ঘাটগুলোর বিআইডাব্লিউটিসির সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপার কমে গেছে। চাপ না থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি পার হয়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঢল : উত্তরাঞ্চলে গ্রামের বাড়ি যেতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঢল নামে মোটরসাইকেল আরোহীদের। ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনে ১১ হাজার ৭৭৭টি মোটরসাইকেল বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা নদী পার হয়েছে।
এই তথ্য নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে টাঙ্গাইল অংশে ১১টি ও সিরাজগঞ্জ অংশে ৯টি টোল বুথ কাজ করা হয়েছে।
গত ঈদে মোটরসাইকেল চলাচলে নানা বিধি-নিষেধ থাকায় বাসের ব্যবসা তুলনামূলক বেশ ভালো ছিল। এবার ব্যবসায় প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুব বলেন, ‘যারা বাসের যাত্রী তারা বাসেই যাবে। বাসের যাত্রী মোটরসাইকেলে যাবে না। এক দিনের বিবেচনায় ব্যবসার পরিস্থিতি বলা কঠিন।’ সূত্র : কালের কন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।