জুমবাংলা ডেস্ক : ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে ৩টি বিষয়ের সমষ্টি- সাক্ষ্য প্রদান করা, সুপারিশ করা, প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান করা।
সাক্ষ্য প্রদান
প্রতিনিধি নির্বাচনে যারা ভোট প্রার্থী, তাদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো- এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে সৎ ও যোগ্য।
পক্ষান্তরে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার অর্থই হলো মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা। যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অনেক বড় অপরাধ ও গোনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সাক্ষ্য প্রদানে সত্য, ন্যয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য প্রদানে ন্যয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতা-মাতা অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র হয়। তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যয় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা (প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে) এড়িয়ে যাও তবে (জেনে রেখ) তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫)
এভাবে কুরআনের অনেক আয়াতে ন্যয়সঙ্গত সাক্ষ্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট প্রদানে অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করলে আল্লাহর কাছে কঠোর জবাবদিহি করতে হবে।
সুপারিশ
ভোট প্রদানে ইসলামের দ্বিতীয় মূলনীতি হলো সুপারিশ করা। কোনো ব্যক্তি ভোট দেয়ার অর্থই হলো যে, সে এ ব্যক্তিকে সৎ ও যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করছে কিংবা তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে।
প্রতিনিধি নির্বাচনে সুপারিশ প্রদানের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা মানুষকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এ সুপারিশ দুনিয়া ও পরকালে ব্যক্তির ভালো ও মন্দের সঙ্গে সুস্পষ্ট সম্পর্কিত। আল্লাহ বলেন-
যে ব্যক্তি সৎকাজের জন্য কোনো সুপারিশ করবে তা থেকে (সৎ কাজের) একটি অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের সুপারিশ করবে সে তার (মন্দ কাজের) একটি অংশ পাবে। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সংরক্ষণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৫)
সুতরাং কাউকে সুপারিশ করে প্রনিনিধি নির্বাচন করার পর এ জনপ্রতিনিধি যদি সৎ ও যোগ্যতার সঙ্গে নিরপেক্ষ জবাবদিহিমূলক সমাজ পরিচালনা করে তবে যারা তাকে প্রনিতিধি হিসেবে সুপারিশ করেছে, তারাও তার ভালো কাজের সাওয়াব বা অংশ পাবে।
আর জনপ্রতিনিধি যদি অসৎ অযোগ্য ও নিরপেক্ষহীন কাজ করে, জবাবদিহিতার বিপরীত কাজ করে তবে যারা এ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে তারাও সব খারাপ কাজের অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। আর এটি মহান আল্লাহর ঘোষণা।
অতএব জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কাউকে সুপারিশ তথা ভোটাধিকার প্রয়োগের আগে প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনা করাও ভোটারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা ভোটের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থী ভালো মন্দ যা কিছু করবে তা ভোট দাতার আমল নামায়ও যুক্ত হবে।
প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান
ভোট প্রদানে ইসলামের তৃতীয় মূলনীতি হলো প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান। যে ব্যক্তি নিজে সৎ কিংবা যোগ্য নয়, সে ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদানে ভোট দেয়া মারাত্মক জুলুম। কেননা অসৎ ও অযোগ্য নেতৃত্বের সব দায়ভার ভোটারকে বহন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে কুরআনসহ প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। এ কুরআন মানুষের একমাত্র জীবন বিধান। যা মানুষ ছাড়া কেউ কুরআনের এ দায়িত্বভার গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। যেহেতু মানুষ কুরআনের আমানত গ্রহণ করেছে।
সুতরাং মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কুরআন অনুযায়ী প্রতিনিধিত্ব করাই ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-
‘নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এ (মানুষের জীবন পরিচালনায় ইসলামের বিধি-বিধান পালনের) আমানত পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা তাতে আশংকিত হলো কিন্তু মানুষ সে দায়িত্বভার গ্রহণ করলো। সে বড়ই অন্যায়কারী, বড়ই অজ্ঞ।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৭২)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।