গত বছরের ২৩মে রাতে মৃত্যু বরণ করেন বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গয়েজ উদ্দিনের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন। তার স্ত্রী মিতুর কাছে নাসিরের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তার মরদেহ দাফন সম্পন্ন করেন নাসিরের স্বজনরা।
এ ঘটনার নয় মাস পর মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথোপকথনে রেকর্ডিং পায় নাসিরের স্বজনরা। পরে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ফাতেমা মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মোঃ মাহতাব হোসেনে মেয়ে এবং রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে। আদালতে হাজির করে বৃহস্পতিবার এ দুই অভিযুক্তের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত নাসিরের বড় ভাই মোঃ জলিল হাওলাদার বরগুনা সদর থানায় অভিযোগ করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে তদন্তকালে ঘটনার প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুকে গ্রেফতার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাতেমা মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বরগুনার একটি দোকানে চার্জ করাতে দেন রাজু। সেখান থেকে তার মোবাইলটি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ফোনে নাসিরকে হত্যার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিষয়ে রাজু ও মিতুর কথোপকথনের রেকর্ড জমা থাকে। পরে হারিয়ে যাওয়া ওই ফোনের কথোপকথন পায় নাসিরের স্বজনরা। এর প্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ করেন নাসিরের বড় ভাই জলিল হাওলাদার। এ অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে রাজু ও মিতুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে নাসিরের বড় ভাই ও মামলার বাদি মোঃ জলিল হাওলাদার বলেন, “মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পাই আমরা। তখন আমাদের কোন কিছু সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি। এঘটনার নয় মাসেরও বেশি সময় পর মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড পাই আমরা। সে রেকর্ডে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথোপকথন রয়েছে। তখন আমরা নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এরপর পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসির-মিতু দম্পতি দুই সন্তানের জনক জননী। তাদের আট বছর বয়সী নুসরাত জাহান নামে এক মেয়ে ও পাঁচ বছর বয়সী নাঈম নামে পুত্র রয়েছে।
ফাতেমা মিতু তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদের পরকীয়া সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে দুইজনে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মিতু আরও জানান, ২৩ মে বিকালে ঘুমের ঔষধ কিনে রাজু তাকে দিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পরে নাসির মজা করে কাঁঠাল খায়। ঘুমের আগে কৌশলে নাসিরকে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়। রাত ১১ টার পরে রাজুকে মোবাইলে জানানো হয়, নাসির ঘুমিয়ে পড়েছে তুমি চলে আসো। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মিতু ও রাজু মিলে নাসিরকে কম্বল চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। মিতু স্বীকার করেছে, তার ইচ্ছে ছিলো রাজুকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করবে।
রাজু জানিয়েছেন, সম্পর্কে দাদী হলেও মিতুকে সে ভাবী বলে ডাকতো। চাকরীর জন্য নাসির স্কুলে গেলেই তারা দাদী-নাতি অনৈতিক সম্পর্কে মিলিতো হতো। নাসির তাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঈদের আগের রাতকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেবার প্রসঙ্গে বলেন, তাদের ধারনা ছিলো ঈদের দিন সবিাই ব্যস্ত থাকবে। কেউ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারবেনা। তবে হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটি তাদের জন্য কাল হয়েছে। রাজু আরও জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে তার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলে।
বরগুনা থানার ওসি তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজুর হারিয়ে ফেলা মোবাইল ফোনটি ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকখালী বাজারের দোকানদার আরেক রাজু পেয়েছে। ওই মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানা যায়। তাদের কল রেকর্ডসহ মোবাইল ফোনটি ওসির হাতে চলে আসলে বুধবার রাতেই মিতু ও রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, নাসিরের বড় ভাই আবদুল জলিল হাওলাদার বাদী হয়ে মিতু ও রাজুকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক জানিয়েছেন, মিতু ও রাজু দুজনই তাদের কাছে নাসিরকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি আরও জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজী হয়েছেন। তারপরেই আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।