জুমবাংলা ডেস্ক : স্ত্রী হত্যা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলার সাক্ষ্যস্মারকে সই করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগপত্রে বাবুল আক্তার ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন—কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া। রাশেদ ও নূরনবী নামে আরো দুই জন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলেও পরে তারা ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
পিবিআই (চট্ট মেট্রো) পরিদর্শক ও মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার দিক থেকে অভিযোগপত্র তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন এটা ঢাকায় (পিবিআই) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো পর্যবেক্ষণ থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করবেন। এরপর পুনরায় তা চট্টগ্রামে পাঠানোর পর আমি আদালতে দাখিল করব। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাবুল আক্তারই এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। তিনিই মিতু হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং অর্থের যোগানদাতা। এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৯ জন জড়িত ছিলেন। তবে দুই জনের ক্রসফায়ারে মৃত্যু হওয়ায় অভিযোগপত্রে তাদের নাম রাখা হয়নি।
বিদেশিনীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরেই স্ত্রীকে হত্যা : পিবিআই সূত্র জানায়, গায়ত্রী অমর সিং নামে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে বাবুল আক্তারের। এরই জের ধরে মিতুকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন বাবুল। ৩ লাখ টাকায় চুক্তি হয় দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার সঙ্গে। বন্ধু ও ব্যাবসায়িক পার্টনার সাইফুলের মাধ্যমে মুসার কাছে ৩ লাখ টাকা পাঠান বাবুল। মুসার নেতৃত্বে কিলিং মিশন ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ভাড়াটে খুনির মাধ্যমে স্ত্রীকে খুন করানোর পর নিজেকে আড়াল রাখতে বাবুল প্রচার করেন, জঙ্গিরা মিতুকে খুন করেছে।
মিতু হত্যার ঘটনাটি দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মিতু নিহত হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় পুলিশের চাকরি হারান বাবুল আক্তার। এর আগে তাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে মিতুর কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া মুসার মুখোমুখি করা হয়। তবে বাবুল ঐ সময় মুসাকে চেনেন না বলে জানান। মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করলেও টানা পাঁচ বছর পর ঐ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তবে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন জামাতা বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি মামলা করেন। একই ঘটনায় দুটি এজাহারের কারণে মিতু হত্যা মামলাটি নতুন মোড় নেয়। পরে আদালত বাবুল আক্তারের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন নামঞ্জুর করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে মোশাররফ হোসেনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আদালত তা গ্রহণ করে।
বাবুলের মামলা অধিকতর তদন্তে মিতু হত্যায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন বাবুল আক্তার। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর মিতুর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ঐ সময় মিতু কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাবুল মিতুকে নিয়মিত নির্যাতন করতেন। সম্পর্কের আরো অবনতি হলে বাবুল আক্তার পরিকল্পিতভাবে লোক ভাড়া করে মিতুকে খুন করেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, মিতু হত্যার মিশনে মোট সাত জন ছিলেন। তারা হলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, শাহজাহান মিয়া, নুরুন্নবী ও রাশেদ। মিতু হত্যায় যে অস্ত্রটি ব্যবহৃত হয়েছিল, তা বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুসাকে দিয়েছিলেন বালু ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক ভোলাইয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।