জুমবাংলা ডেস্ক : ফরিদপুরে সেকেন্দার আলী মোল্লা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমিকের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের স্বামীকে হত্যা করেন নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম (৪৫)। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চরকান্দা গ্রামের সেকেন্দার আলী মোল্লার স্ত্রী মোসাম্মাৎ হাফিজা বেগম(৪৫) নিজেই বাদি হয়ে ভাঙ্গা থানায় খোকন মোল্লা এবং খলিল মোল্লার নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাদি হাফিজা বেগম ওই মামলায় উল্লেখ করেন, গত ২৪ অক্টোবর রাত আটটার দিকে আমার স্বামী সেকেন্দার আলী মোল্লা তার বড় ভাই খোকন মোল্লার কাছে পাওনা টাকা আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। দুইদিন পর ২৬ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে চরকান্দা গ্রামের নির্মাণাধীন রেল লাইনের দক্ষিণ পাশে রাঘদার বিলে বাদির স্বামীর লাশ দেখে তাকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নিজের স্বামী বলে শনাক্ত করেন তিনি। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত ও ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
হাফিজা বেগম অভিযোগ করেন, খোকন মোল্লা ও খলিল মোল্লার সঙ্গে জমি ও রেল লাইনের অধিগ্রহণকৃত এজমালি সম্পত্তির টাকা-পয়সা নিয়ে সেকেন্দারের বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে ওই দুই আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন বাদির স্বামীকে হত্যার পর লাশ বিলের পানিতে ফেলে রাখে। বাদির এজাহারের ভিত্তিতে ভাঙ্গা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার তদন্তে দেখা যায়, মামলার বাদি হাফিজা বেগম ও তার স্বামী সেকেন্দারের সঙ্গে আরামবাগ চরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান ওরফে ভুলুর (৬৫) সুসম্পর্ক ছিল। এদিকে সেকেন্দারের সঙ্গে তার আপন বড় ভাই খোকন মোল্লা ও চাচাতো ভাই জমির মোল্লার রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণের টাকার ভাগ বন্টন নিয়ে বিরোধ ছিল। অপরদিকে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আতিয়ার রহমান ভুলুর(৬৫)সঙ্গে সেকেন্দারের বড় ভাই খোকন মোল্লার বিরোধ ছিল।
মামলার বাদি হাফিজা বেগম, স্বামী সেকেন্দারের সঙ্গে খোকন মোল্লার বিরোধের সুযোগ নিয়ে ভুলু মোল্লার সঙ্গে তার পরকীয়ার সর্ম্পককে পুঁজি করে খোকন মোল্লা ও জমির মোল্লাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। এরপর আতিয়ার রহমান ভুলুর পরামর্শে হাফিজা বেগম তার স্বামীকে হত্যা করতে রাজি হন।
হাফিজা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর তারিখ রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের টেবলেট সেকেন্দারকে খাইয়ে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। ভুলু মোল্লাও পুকুর পাড়ে অবস্থান করে। হাফিজার সামনেই ভুলু সেকেন্দারের পিঠে দুইটা লাথি মারে। ভুলুর ছেলে সম্রাটও সেকেন্দারের বুকে কয়য়েকটা ঘুষি মারে। ভুলু মোল্ল্যা সেকেন্দারের মুখ চেপে ধরে রাখলে সেকেন্দার একটা গোঙানি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায়।
লাশ নৌকায় তোলার সময় সেকেন্দারের ছেলে হোসাইন তার বাবার লাশ নৌকায় তুলতে দেখে ফেলে। তখন আসামী ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট হোসাইনকেও হত্যার হুমকি দেয়। পরে ভুলু ও তার ছেলে হোসাইনকে সহ নৌকায় লাশ তুলে চরকান্দা রেল লাইনের একটু দুরে লাশ নৌকা থেকে বিলের মধ্যে ফেলে দেয়।
পরের দিন ২৬ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে ওই বিল থেকে সেকেন্দার আলী মোল্লার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হাফিজা বেগম ও ভুলু মোল্লা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তের এক পর্যায়ে গত আট জুন অভিযান চালিয়ে ভুলু মোল্লা ও তার ছেলে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনার বিষয়টি স্বেচ্ছায় স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল ৯ জুন রাতে শাহমুল্লুকদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাফিজা বেগম ও তার ছেলে হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তারা দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।